আজ আতাউর রহমান খান কায়সারের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী
জাহিদ হাসান হৃদয়, (আনোয়ারা) :
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার (৯ অক্টোবর)।
এ উপলক্ষে দিনব্যাপী তার জন্মস্থান চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় খতমে কুরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
আতাউর রহমান খান কায়সার আতাউর রহমান খান কায়সার ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলহাজ্ব ইয়ার আলী খান দুই মেয়াদে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। আতাউর রহমান খান কায়সার ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কমিটির সদস্য হন ও নেতৃত্ব দেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও এম এ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন এ রাজনীতিক। ১৯৬৯ এর গনুভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী-কুতুবদিয়া থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাঙালির অধিকার আদায়ে উত্তাল গনআন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মুজিবনগর সরকারের দেয়া ১ নম্বর সেক্টরে রাজনৈতিক সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসাবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনকালীন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭; বাঙালির জাতীয় জীবনের ক্রান্তিকালে তিনি সর্বদা রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ছিলেন, ফলস্বরূপ ঐ সময়ে দুইবার গ্রেফতার হয়ে ১১ মাস কারাভোগ করেন। তৎকালীন সামরিক শাসক দ্বারা বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ৮০’র দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন ও ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া এবং ১৯৯১-৯২ সালে আওয়ামী লীগের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নে ওতোপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক নির্বাচিত হন আতাউর রহমান খান কায়সার।
১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ও ১৯৯৯ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন আতাউর রহমান খান কায়সার। ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু এ পদে ছিলেন।
২০১০ সালের ২৮ আগস্ট সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে কক্সবাজার যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ২০১০ সালের ৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। চট্টগ্রামের চন্দনপুরাস্থ বংশাল বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
উল্লেখ্য যে,প্রখ্যাত এ রাজনীতিবিদের বড় মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক।