এবার মাদরাসার ৬ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিলেন শিক্ষক
মো. রাকিব হোসাইন রনি, (লক্ষ্মীপুর) :
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মাদরাসায় দশম শ্রেণীর ৬ ছাত্রের চুল কেটে দিলেন মঞ্জুরুল কবির নামে ওই মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঘটনাটির একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তদন্তে নামে পুলিশ।
সরেজমিনে গিয়ে মাদ্রাসার সুপার, চুল কাটা ছাত্র, তাদের অভিভাবক ও অভিযুক্ত শিক্ষকের সাথে কথা বলে সত্যতা পান বলেও নিশ্চিত করেছেন রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক কামাল হোসেন।
এর আগে গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বামনী ইউপির কাজির দিঘিরপাড় আলিম মাদরাসার দশম শ্রেনীতে ক্লাশ চলাকালীন সময় ক্লাস রুমের সামনে বারান্দায় এ ঘটনায়। পরে তারা ক্লাশ না করেই মাদরাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এনিয়ে ছাত্র, অভিভাক ও স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মাদরাসার দাখিল শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল আলম ও ফজলে রাব্বীসহ কয়েকজন জানায়, ঘটনার সময় তাদের ইংরেজি ক্লাশ চলছিল। এ সময় হঠাৎ করে সিনিয়র শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির স্যার কাঁচি (কেঁচি) দিয়ে আমাদের ৬ ছাত্রের মাথার চুল কেটে দেয়। এ ঘটনার পর ছাত্ররা ক্লাশ না করে বেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে মাদরাসাটির অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় ছাত্ররা তাদের ক্লাশ শেষ করে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ছাত্র জানায়, ইংরেজি ক্লশের প্রথম ঘণ্টা পড়ার পর হঠাৎ করে মঞ্জুরুল স্যার আমাদের (ক) শাখার ক্লাশে ঢুকে ৬ ছাত্রের চুল কেটে দেয়। কিন্তু (খ) শাখার কোন ছাত্রের চুল উনি কাটেনি। আমি মাথা বেল করে ৪ দিন মাদরাসায় যায়নি। পরে স্যার দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। এর পরে আমি মাদরাসায় অংশগ্রহণ করি।
অভিযুক্ত মাদরাসার শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সকল ছাত্রকে পরীক্ষার আগের দিন চুল কেটে মাদরাসায় আসতে বলেছি। দাখিলের কয়েকজন ছাত্র কমিটির চার শিক্ষকের কথার অবাধ্য হওয়ার কারণে কয়েকজনের চুল কেটে দিয়েছি। তাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকা ও নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার জন্যই কমিটির আমিসহ আরো তিন শিক্ষকের উপস্থিতিতে চুল কেটে দিয়েছি। একটা পক্ষ মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারনা করছেন।
ঘটনার তদন্তকারি কর্মকর্তা রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, থানার ওসি স্যারের নির্দেশে আজ শুক্রবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ওই মাদরাসায় গিয়ে সুপার, চুল কাটা কয়েকজন ছাত্র, তাদের অভিভাবক ও অভিযুক্ত শিক্ষকের সাথে কথা বলি এবং ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। কয়েকদিন পূর্বে মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির এঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এঘটনায় সুপার বলেছেন শনিবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
মাদরাসা সুপার মাওলানা বালাকাত উল্লাহ বলেন, ঘটনাটি কোন ছাত্র বা তাদের অভিভাবক অভিযোগ করেননি। আজ শুক্রবার থানার এস আই কামাল হোসেন ঘটনা তদন্ত করেছেন। শনিবার মাদরাসায় গেলে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বামনী ইউপি চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন মন্সী বলেন, মাদরাসার শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামমের আমির হওয়ায় প্রায় সময় ছাত্র-ছাত্রীদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তার ভয়ে ছাত্রতো দূরের কথা অন্য শিক্ষকরাও নিরুপায় বলে আমি জানি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যদি সত্যতা পাওয়া যায় তা হলে বিধিমোতাবেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪জন ছাত্রের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে এক নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এবার লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসার ৬ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিলো শিক্ষক।