সান্তাহারের রিমনকে বাঁচাতে আর্থিক সাহায্যের আবেদন
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর শহরের খাড়ির ব্রিজ এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি চাতালে বসবাস করে রিমন হোসেন (১৪)। সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা তৌহিদুল ইসলাম ও মা রোজিনা বেগম ওই চাতালে শ্রমিকের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। জন্মের পর বাবা মায়ের আদরের সন্তান রিমনকে ঘিরে নানা স্বপ্ন দেখেন তাঁরা। ছেলে বড় হয়ে সংসারের দুঃখ কষ্ট দূর করবে। গড়ে উঠবে সুখের সংসার। কিন্তু আদরের সেই ছেলেকে নিয়ে রেলপথে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় বাবা-মা’র সেই স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে। এখন ছেলেকে বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসার খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে বাবা তৌহিদুল ইসলাম। আর ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের দুফোঁটা জল ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই মা রোজিনার।
আহত রিমন হোসেনের বাবা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত ঈদুল আজহার পরের দিন ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বারোবিশা বামোনিয়া গ্রামের উদ্দেশে ট্রেন যোগে সপরিবারে রওনা হন। সান্তাহার জংশন স্টেশন থেকে চিলাহাটিগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস আন্তনগর ট্রেনে যাত্রাকালে বেলা ১২টার দিকে সৈয়দপুর স্টেশনে পৌঁছনোর সময় আউট সিগনাল এলাকায় রেললাইন ঘেঁষে ফল বোঝাই একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রেনটি স্টেশনে থামতে গতি কমানো হচ্ছিলো। আর রিমন ট্রেনের জানালার বাহিরে হাতের কুনই রেখে মায়ের কোলে বসে ছিল। এসময় ট্রেনের বগিটি ওই ট্রাক অতিক্রম করতেই ট্রাকের পেছনের ডালাটি আকষ্মিকভাবে খুলে গিয়ে রিমনের হাতে এসে পড়ে। চলতি ট্রেন থেকে ট্রাকের সঙ্গে হাতটি ধাক্কা খেতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে রিমন। কয়েক মিনিট পর ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়াতেই দায়িত্বরত টিটিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা রিমনকে উদ্ধার করে দ্রুত সৈয়দপুর রেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। সেখানে চিকিৎসা শেষে রংপুরে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কান্নাজড়িত কন্ঠে তৌহিদুল আরো জানান, আমার সহায় সম্বল বলতে শুধু এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাছাড়া নিজের কোনো জায়গা জমি নেই। চাতাল মালিকের দেয়া একটি কুঁড়ে ঘরে থেকে সেখানে স্বামী-স্ত্রী দিনমজুরের কাজ করে কোনো মতে সংসার চালিয়ে রিমনকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন দেখে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এই দুর্ঘটনায় সে স্বপ্ন তছনছ হতে বসেছে। চোখের সামনে ছেলের এমন পরিস্থিতি দেখে কোনো বাবাই বসে থাকতে পারে না। তাই আমিও ব্যতিক্রম নয়। ছেলেকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খচর করে চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসক বলেছেন শিগগিরই আরো দুটি অপারেশন করাতে হবে। এজন্য সবমিলিয়ে তাকে সম্পন্ন সুস্থ করে তুলতে প্রায় আরো ৫ লাখ টাকার প্রয়োজন।
সান্তাহার পৌরসভার প্যানেল মেয়র জার্জিস আলম রতন সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে জানান, সমাজে অনেক বিত্তশালী মানুষ রয়েছে। তারা যদি আহত রিমনের পাশে দাঁড়াত তাহলে তার বাবা চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারতো। রিমনকে সুস্থ করতে সামর্থ অনুযায়ী সকলকে সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিৎ। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করে তাদের কাছে আবেদন পাঠানোর প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। রিমনকে সাহায্য পাঠাতে পারেন তার বাবার এই ০১৭১০-৩৬৭৯৭৬ (বিকাশ পারসোনাল) নম্বরে।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, সমাজসেবা অফিসের নির্ধারিত ফরমে সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করলে চিকিৎসা বাবদ আর্থিক সহযোগিতা পাবেন।