স্বাস্থ্য সহকারি হয়েও চাকরি করছেন অফিস সহকারি পদে
ইকরামুল আলম, (ভোলা) :
ভোল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সহকারী হয়েও বিধি বহিঃভুত ভাবে ২৮ বছর ধরে অফিস সহকারি পদে চাকুরী করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একাধিকবার তাকে নিজ পদে ফিরে যেতে চিঠি দিলেও সেটি কর্ণপাত না করেই তিনি বীরদর্পে অফিস সহকারি পদেই চাকুরী করে যাচ্ছে। এ পদে চাকুরীকালিন সময়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার ঘুষ গ্রহণসহ নানা অনিয়ম অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, মো. ওমর ফারুক ১৯৮৮ সালের জুন মাসে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে ভোলার তৎকালীন সিভিল সার্জন ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধি বহিঃভুত ভাবে তাকে অফিস সহকারী পদে পদায়ন করেন। বিষয়টি বিধি বহিঃভুত হওয়ায় ২০০১ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওমর ফারুককে স্ব-পদে ফিরে যেতে একটি আদেশ জারি করেন। তাতেও সে নিজের (স্বাস্থ্য সহকারী) পদে না গিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভোলা থেকে দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অফিস সহকারী পদে বদলী হয়ে যায়। সেখানে থাকা কালে ঘুষ গ্রহণের দায়ে অভিযুক্ত হলে তাকে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করা হয়। লালমোহনে থেকে অভিযুক্ত হয়ে দৌলতখানের খায়ের হাট ৩০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অবৈধ উপায়ে পুনরায় ভোলা সদর হাসপাতালে বদলী হয়ে আসেন। সর্বশেষ তাকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করা হয়। বর্তমানে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী পদে কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে যে সকল স্বাস্থ্য সহকারীদের অফিস সহকারি, ক্যাশিয়ার, স্টোর কিপারসহ অফিসিয়াল পদে পদায়ন করা হয়েছে তাদের আদেশ বাতিল করে পূর্বের পদে ফিরে যেতে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি আদেশ জারি করেন। একই আদেশে পূর্বে যারা নিজ পদে ফিরে যায়নি তাদের তথ্য মহাপরিচালক বরাবর প্রেরণের কথা বলা হয়।
একই বছরে বরিশাল আঞ্চলিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কে কোন পদে পদায়ন করতে পারবে তার একটি নির্দেশনা জারি করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় স্বাস্থ্য সহকারী একমাত্র সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ছাড়া অন্য কোনো পদে যেতে পারবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক চিঠি ও নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিভাবে ওমর ফারুক ২৮ বছর ধরে অবৈধভাবে চাকুরী করে আসছেন সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে ভোলার স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে নানা নেতিবাচক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে ওমর ফারুক ভোলা সদর হাসপাতালে অফিস সহকারী থাকার সুযোগে হাসপাতালের অধিগ্রহণকৃত জমি নিজের নামসহ মা ও ভগ্নিপতির নামে রেকর্ড করে নেয়। পরে ওই জমিতে মার্কেট নির্মান করে ভাড়া দেয়। বিষয়টি নিয়ে গত কিছু দিন আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে ওমর ফারুক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবসহ পাঁচজনকে আসামী করে ভোলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। ওমর ফারুক নিজে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মচারী হয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কিভাবে মামলা করতে সাহস পায় সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মো. ওমর ফারুক বলেন, আমি বিধি মোতাবেক প্রধান সহকারী পদে আছি। আমাকে কর্তৃপক্ষ এ পদে পদায়ন করেছে। ভোলায় এরকম আরো ২০ জনের মতো আছে আমি একা না।
হাসপাতালের জমির বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, আবার বাবা স্থানীয়দের কাছ থেকে আমাদের মা ও ভাই-বোনদের নামে জমি ক্রয় করেছে। আমি হাসপাতালের কোনো জমি দখল করিনি।
ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান ওমর ফারুকের পদায়নের বিষয়টি বিধি বহিঃভুত উল্লেখ করে জানান, ওমর ফারুকের ব্যাপারে একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের আলোকে আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টটি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিভাগীয় পরিচালকের মাধ্যমে মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে।