বগুড়ায় স্মরণসভা ও স্মৃতি পদক প্রদান
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দ্যা ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, নিরাপত্তা ছাড়া সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা হয় না। একদিকে রাষ্ট্রকে সাংবাদিকের ব্যক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অন্যদিকে যে প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক কাজ করবে সেই প্রতিষ্ঠানকে চাকরি ও বেতনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর এই নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত করা গেলেই সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতা আশা করা সম্ভব।
বগুড়ার সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী হত্যাকান্ডের ১৭তম বার্ষিকীতে স্মরণসভা ও স্মৃতিপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিইউজে) এই স্মরণসভা ও স্মৃতিপদক প্রদানের আয়োজন করে।
সভার শুরুতেই কালোব্যাজ ধারণ ও প্রয়াত সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
বিইউজে সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টুর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।
প্রধান বক্তা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার পর থেকে যেসব সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন তার মধ্যে একমাত্র ফরিদপুরের গৌতম দাস হত্যাকান্ডের বিচার নিম্ন আদালতে সম্পন্ন হয়েছে, অন্যকোন হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। ফলে এই পেশাটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিশ্বে মুক্ত গণমাধ্যমের মানদন্ডে নিচের দিকে অবস্থান। যতোদিন পর্যন্ত এসব হত্যাকান্ডের বিচার না হবে, সাংবাদিক সমাজ ততোদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
স্মরণসভায় অন্যান্য বক্তা বলেন, দীপঙ্কর চক্রবর্তী ছিলেন একজন নির্বিবাদী মানুষ। দীর্ঘদিন পর পুলিশ এই হত্যাকান্ডে জঙ্গি সম্পৃক্ততার নাটক সাজিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই ১৭ বছরে ১২ বার তদন্ত কর্মকর্তা বদলিয়ে দীপঙ্কর হত্যা নিয়ে শুধুমাত্র প্রহসন করা হয়েছে। ঘটনার সময় ও তার পরবর্তী সময়ে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টাও করা হয়।
স্মরণসভায় নিহত সাংবাদিক দীপঙ্করের ছেলে অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, আমরা এতোদিনে নিশ্চিত হয়েছি আর কখনও সঠিক বিচার পাবো না। হত্যার পর থেকে তদন্তের নামে প্রহসন চলেছে। আমরা এ সব নাটক দেখতে দেখতে ক্লান্ত। আমরা পরিবার অন্তত আমার বাবার খুন হওয়ার সঠিক কারণ টুকু জানতে চাই।
বিইউজে সাধারণ সম্পাদক জে এম রউফের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সম্পাদক মাহমুদুল আলম নয়ন, সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান, প্রবীন সাংবাদিক এ এইচ এম আখতারুজ্জামান, চপল সাহা, সমুদ্র হক, জয়নাল আবেদীন, মোহন আখন্দ, মাসুদুর রহমান রানা, বিধান চন্দ্র ও শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক।
স্মরণসভা শেষে দীপঙ্কর চক্রবর্তী স্মৃতিপদক প্রদান করা হয়। তৃতীয় বারের মতো দেওয়া ২০২১ সালে এ পদক পেয়েছেন প্রবীন সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ও রবিউল করিম হেলাল এবং দৈনিক করতোয়ার বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য্য শংকর।
২০০৪ সালের ২ অক্টোবর রাতে কর্মস্থল দুর্জয় বাংলা পত্রিকার কাজ শেষে নিজ বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে ফেরার পথে বাসভবনের সন্নিকটে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন তিনি। ওই ঘটনায় নিহত সাংবাদিকের বড় ছেলে পার্থসারথী চক্রবর্তী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দীর্ঘসময় থানা পুলিশ, ডিবি, সিআইডি তদন্ত করে। সর্বশেষ গত ২০১৭ সালে পুলিশ ওই হত্যাকান্ডে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততা বিষয়টি সামনে আনে। দেশের আলোচিত জঙ্গি হামলা হলি আর্টিজেনের অন্যতম আসামি রাজীবগান্ধি এই হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে। আগামী ৩০ নভেম্বর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিও ধার্য্য রয়েছে।