পাটের মূল্য ও কাঠিতে বাড়তি আয়ে কৃষক-কৃষাণিরা খুশি
সুশান্ত কুমার সরাকার, (পাবনা) :
পাটের পাশাপাশি পাটকাঠিতেও বাড়তি আয়ে খুবই খুশি পাটচাষিরা। অতীতের চেয়ে বর্তমানে বেশি দামে যেমনি পাট বিক্রি হচ্ছে; তেমনি পাটকাঠির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অতীতের চেয়ে তিন চার গুন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাটচাষিরা উৎপাদন ভেদে পাটের সাথে বিঘা প্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আয় করছেন। এটা একটি বাড়তি আয়। এতে হাসি ফুটেছে কৃষক-কৃষাণিদের মুখে। ফলে পাট চাষের প্রতি কৃষক আরো বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পাটের আকার বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। পাট গাছ বেশি লম্বা হলে সেই পাটকাঠির চাহিদা ও দাম বেশি হয়ে থাকে। আবার এলাকা ভেদে দাম কম-বেশি হয়ে তাকে। তবে গড় হিসেব করতে গেলে পাবনা অঞ্চলে প্রতি হেক্টার জমি থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার পাটকাঠি বিক্রয় হয়ে থাকে।
জানা যায়, এক সময় ছিল পাটকাঠি দিয়ে প্রধানত গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের ঘরের বেডা তৈরি করা হতো। জ্বালানি হিসেবে এর যথেষ্ট ব্যবহার ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে পাটকাঠি এখন ক্রমশ অর্থকরী পণ্য হয়ে উঠেছে। পানের বরজ, পার্টিকেল বোর্ড ও চারকোল কারখানায় পাটকাঠির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে দেশে পাট ধোঁয়া মৌসুম শেষ পর্যায়ো। এখন জেলার বিভিন্ন হাটে পাট ও পাটখড়ি বিক্রয় চলছে। পাট এবং পাটখড়ি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক কৃষাণিরা। গ্রামীণ সড়কের পাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে চলছে পাটকাঠি শুকানোর কাজ। আবার সেখান থেকেই অনেক পাইকাররা পাটখড়ি কিনো নিয়ে যাচ্ছেন।
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার সুঁতিজোলার দু’পাড় এবং একদন্ত-দেবোত্তর সড়কের দু’ধারে পাটকাঠি শুকানো হচ্ছে মাইলের পর মাইল। সুজানগর উপজেলার সড়কসমূহেও এইভাবেই পাটকাঠি শুকানো হচ্ছে। এছাড়া চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর উপজেলার বিভিন্ন নদী ও জলাশয় পাড়েও একই দৃশ্য।
পাবনার অঞ্চলের পাটচাষিরা জানান, বর্তমান পাট ৩ হাজার ২শ’ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মন দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পাবনা সদর উপজেলার টেবুনিয়া গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম জানান, একশ’ আঁটি পাটকাঠি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন সাড়ে চারশ’ টাকা থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকায়। একই সংখ্যক পাটিকাঠি একসময় বিক্রি করা হতো মাত্র একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকায়।
উপজেলার উগ্রগড় গ্রামের মানিক হোসেন জানান, ৫ হাজার টাকা হাজার দরে পাটখড়ি বিক্রি করেছেন। পাটখড়ি বিক্রি করে তার জমি থেকে পাট কাটা ও ধোঁয়ার খরচ হয়ে গেছে। এক সময় পাটখড়ির এত কদর ছিলো না।
সুজানগর উপজেলার সাহাপুর গ্রামের কৃষক আবেদ আলী বলেন, রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও পানের বরজের ছাউনি ছাড়া পাটকাঠি আর কোনো কাজে লাগত না। কিন্তু এখন পাটকাঠি তারা ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন।
পাবনা জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র উপপরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘এ বছর পাবনার নয় উপজেলায় ৪৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়। কিন্তু সে তুলনায় আবাদ হয়েছে বেশি। আর পাটের উপজাত এই পাটখড়ি বা পাটকাঠি দিয়ে পানের বরজ, কার্বন ফ্যাক্টরীসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হওয়ায় বাজারে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে ভালো দামে পাটকাঠি বিক্রি করে এ পাটচাষিরা লাভবান হচ্ছেন। বাড়তি এই আয়ে কৃষক কৃষাণিরা খুবই খুশি।’