উচ্চ শিক্ষিত হয়েও রাস্তায় চা বিক্রি করছেন মেহেদী
এইচ কবীর টিটো, (গফরগাঁও) :
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কোয়ার্টাররের ঠিক সামনের সড়কে মেহেদী হাসানের(২৯) চায়ের দোকান রয়েছে। চা বানিয়ে নিজেই পরিবেশন করেন তিনি। চায়ের দোকানি হলেও অনেকেই মেহেদীকে সম্মান করেন। কারণ, উচ্চ শিক্ষিত বলে। তিনি প্রমাণ করেছেন, কোনো কাজই ছোট নয়।
মেহেদী নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর বাড়ি গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে । তিনি গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন।
তিন ভাইবোনের মধ্যে মেহেদী বড়। তাঁর ছোট এক ভাই লেখা পড়া করছে।বোন বিয়ে দিয়েছেন। ছোট্ট চা বিস্কিটের দোকানটি তাঁদের আয়ের ভরসা এখন। চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলছে না সবার পড়াশোনা ও সংসারের খরচ। মেহেদীর মা রুমেনা আক্তার(৫০) দীর্ঘ দিন ধরে হার্ট বাল্বের সমস্যায় ঘরে পড়ে আছেন । বাবা আবুল হোসেনের(৬০) সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে পড়েন আরো বিপদে।
কৃষি জমি বলতে বাড়ির আঙ্গিনা সহ খুব স্বল্প মাটি রয়েছে।যেখান থেকে দুই থেকে তিন মণ ধান আসলেও বছর চলে না।
এমন অবস্থায় খুব কষ্ট করে মেহেদী তাঁর লেখাপড়া শেষ করলেও জুটেনি একটি সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরি।বহু জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েও চাকুরী নামের সোনার হরিণের দেখা পান নি।এখানে চাকুরীর সাথে টাকার একটি নিরব সম্পর্ক রয়েছে।মায়ের এই করুণ অবস্থার কথা চিন্তা করে মেহেদী বিয়ে করতে বাধ্য হয়। দুইবেলা খাবার আর সংসারের হাল ধরতে পারছিলেন না।
মেহেদীর একটি ২বছরের ফুটফুটে ছেলে সন্তান রয়েছে।পরিবার নতুন অতিথির আগমনে খুশি হলে জীবন হয়ে উঠে আরো কষ্টের।এমনিতেই মেহেদী খুব কষ্টেও কাওকে কিছু বলে না। কোন কূলকিনারা না পেয়ে গফরগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান কোয়ার্টারের রাস্তার সামনে ছোট্ট এই চা বিস্কুটের দোকান খুলে বসেছেন।তিনি মনে করেন,আমি অন্যায় কিছু করছি না।আমি জীবন চালাতেই চা বিক্রি করছি।বড় পরিসরে ব্যবসা করার মত আমার অর্থ নেই।
তাতে কি, হয়তো কোনদিন হয়ে যাবে।তবে কষ্ট একটিই মায়ের জন্য ভালো চিকিৎসা সেবা দিতে পারছিনা। যদিও আজ আমার কিছু হয়ে উঠেনি তবে আমার সন্তানের জন্য সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন।