সুস্বাদু কাচকি মাছের চানাচুর-বার তৈরি করল বাকৃবি
মো. নজরুল ইসলাম, (ময়মনসিংহ ব্যুরো) :
মিঠা পানির দেশি প্রজাতির খুব ছোট স্বচ্ছ ও সুস্বাদু কাচকি মাছ। মাছের বহুমূখীকরণের লক্ষ্যে যারা ছোট মাছ খেতে চায় না বিকল্প উপায়ে তাদের সেই পুষ্টি প্রহণের উপায় উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক। মাছ প্রক্রিয়া করে তারা তৈরি করেছেন কাচকি মাছের চানাচুর, কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার।
কাচকি মাছ দেশের নদনদী, খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। কিন্তু আকার ছোট এবং কাঁটাযুক্ত হওয়ায় অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না। বিশেষ করে বাচ্চারা খেতে চায় না। কিন্তু এই ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, যা তাদের ঘাটতি থেকে যায়।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গবেষক দলের প্রধান বাকৃবি’র ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার। সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালনা করেন গবেষকরা। গবেষণায় সহযোগী গবেষক ছিলেন প্রভাষক মোবারক হোসেন।
ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার বলেন, ছোট মাছ থেকে মূল্য সংযোজিত তৈরিকৃত খাদ্য উৎপাদনে গবেষণায় কাচকি মাছকে নির্বাচন করি। কাচকি মাছে শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। বর্তমানে এ মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাচকি মাছ গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার আরও বলেন, এ পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছ খেতে শিশুসহ অনেকেই অনাগ্রহী। মাছের এ প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল সহজে তারা যেন পেয়ে যায় সেজন্যে দুটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬টি পণ্য উৎপাদন করেছি। শিশুসহ সব বয়সের মানুষের চানাচুর ও বার জাতীয় খাবারটি খুব পছন্দনীয়। তাই ক্যাটাগরি-১ এর পণ্যগুলো মূলত চানাচুর জাতীয়। ক্যাটাগরি-২ এর পণ্যগুলো মূলত কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার জাতীয় করে তৈরি করা হয়েছে। এতে তারা এসব মুখরোচক খাবারের সঙ্গে মাছের পুষ্টিও গ্রহণ করতে পারবে বলে জানান তিনি।
মোবারক হোসেন বলেন, মুখরোচক খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান বৃদ্ধির লক্ষ্যেই আমরা মূলত গবেষণাটির প্রকল্প সম্পন্ন করেছি। ছোট মাছের কাটা খেতে হবে চিবিয়ে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। অন্যদিকে গর্ভবতী মা এবং দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিয়ে থাকে এ কাচকি মাছ।
পণ্যগুলোর বাজার মূল্য কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষক দলের প্রধান নুরুল হায়দার বলেন, সাধারণ প্রাণের ২৫ গ্রামের যে পিনাট বার পাওয়া যায় তার দাম ১০ টাকা করে। তাই মাছের তৈরি বারের দাম ১৫-২০ টাকা করে হতে পারে।
প্রতি কেজি মাছের তৈরি বার বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন। অন্যদিকে মাছের চানাচুরের দাম নির্ধারণ হবে মাছের পরিমাণের ওপর। চানাচুরে মাছের পরিমাণ যত বেশি হবে তার দামও তত বেশি হবে বলে জানান তিনি।
বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা বলেন, এ ধরনের পণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে পুষ্টিকর ছোট মাছগুলো সব শ্রেণির
ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। যা বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।