শিরোনাম

South east bank ad

প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে আলো দেখাচ্ছেন নতুন প্রজন্মকে অন্তরা

 প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এইচ কবীর টিটো, (গফরগাঁও) :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৫ শতাংশ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী।

পূর্ণ পরিসংখ্যান না থাকলেও, বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি বলে ধারণা করা হয়।
দেশটিতে এই বিপুল পরিমাণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই শিক্ষার সুযোগ পায়না। আর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা খুবই নগণ্য।

বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে যে কয়জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌছেছেন তাদের একজন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের উথুরী গ্রামের আবু আক্তার ও শাহনাজ বেগমের মেয়ে জান্নাতুল জহুরা অন্তরা জন্ম থেকেই ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন হলেও
অন্তরা এখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌছুনোর পেছনে এই প্রতিবন্ধীদের সবারই রয়েছে সংগ্রামের গল্প।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়াশোনা শেষের দিকে থাকতেই, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন অন্তরা। পাঁচ বছর বয়স থেকেই তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ।

অন্তরার মতো বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের খুব কম অংশই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে।

সরকারী বা বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার যে সুযোগ রয়েছে তার প্রায় পুরোটাই প্রাথমিক কিংবা বড়জোর মাধ্যমিক পর্যন্ত। কিন্তু এরপর থেকে খুব শক্ত মনের জোর না থাকলে প্রতিবন্ধীদের জন্য পড়ালেখা খুবই কঠিন।

উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই খুবই কম এবং শ্রুতিলিখনের জন্য তাদের যে অন্য কারো সাহায্য নিতে হয় সেটিও পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য সাংকেতিক ভাষা বোঝানোর মতো কেউ থাকে না এবং অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চলাচলের উপযুক্ত নয়।এর সব কিছু প্রতিকূলতা কে ছাপিয়ে যান অন্তরা।

অন্তরা নামের অর্থ হচ্ছে সাহসী, নির্ভীক।তিনি সত্যিই একজন সাহসী, নির্ভীক নারী।

অন্তরার পাঁচ বছর বয়সে জল বসন্ত দেখা দিলে চোখের শেষ আলোটুকুও নিভে যায়। সে সময় তার ছোট খালা শিরিন আক্তার গাজীপুর জেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান। বিশেষ পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে অন্তরা এসএসসি পাশ করে ২০১৫ সালে ভর্তি হয় বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজে। সেখান থেকে ২০১৭ সালে ৩.৯২ রেজাল্ট নিয়ে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ে।

ইতিমধ্যে ২০১৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে উত্তীর্ণ হয়ে জান্নাতুল জহুরা ২০২০ সালে যোগদান করেন টাঙ্গাব ইউনিয়নের রৌহা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে ছাব্বিশ কিলোমিটার দূরবর্তী স্কুলে গিয়ে তাকে ক্লাশ নিতে হয় ছাট ভাই অমিতের মোটর বাইকে করে ।

উপজেলায় এই প্রথম কোনো দৃষ্টি প্রতিবন্ধি নারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হলেন। কিছুদিন ক্লাশ হতেই করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।দীর্ঘ আঠারো মাস পর গত ১২ সেপ্টেম্বর আবার স্কুল খুললে, নতুন কর্মস্থল সম্পর্কে অন্তরা জানায়, প্রথমেই আমার অবস্থান সম্পর্কে সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সংক্ষেপে অবহিত করি। বিদ্যালয়ের সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছে।

রৌহা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত)ৎপ্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বলেন, তিনি বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাশগুলো নিবেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সালমা বেগম বলেন, তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর অন্ধকার জগতে আলোর ছড়াবেন। নারী সমাজের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত।

গত ১৯ মার্চ নিজের পছন্দে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন বন্ধু দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ওবায়দুর রহমানকে। পরিবার সম্পর্কে অন্তরা বলেন,বাবা-মায়ের বাইরে আমাকে সবচেয়ে বেশী উৎসাহ দিয়েছেন আমার একমাত্র মামা মশিউর রহমান রাজু।

বাকি পড়াশোনা শেষ করে আরো ভাল কিছু করতে চাই দেশ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে।আমি বলতে চাই, একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তান দেশের জন্য অভিশাপ নয় আশির্বাদ হতে পারে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: