বিসিক শিল্প নগরীতে কড়া নজরদারি চায় বরগুনার মানুষ
এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা) :
"শরৎ সেজেছে কাশফুলেথরে বিথরে বালুচরে! সাদা মেঘের শতদল উড়ছে অপরূপা নীলাম্বরে!"। এটা কাশফুল নিয়ে একটি কবিতার দু'টি চরণ মাত্র। কাশফুল কেন্দ্রীক এ কবিতাটি বরগুনায় সদ্য তৈরি হওয়া বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে বালুচরে জন্ম নেয়া কাশফুলকে কেন্দ্র করে।
যেখানে জন্ম নেয়ার কথা ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা। অথচ ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছরেও হয়নি একটিও কুটির শিল্প গড়ে তোলার কোন ধরনের ক্ষুদ্র প্রয়াস। হবেইবা কি করে! শিল্পনগরীর কাজ শেষ হয়েও হচ্ছেনা। বরগুনার ক্রোক এলাকায় ১০.২০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা বিসিক শিল্প নগরী। অথচ সেখানে শিল্প নগরীর বদলে সৌন্দর্যের অভয়ারণ্য কাশবনে মুখরিত হয়ে আছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করেছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। এতে বরগুনার ক্ষুদ্র শিল্প ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নানা জটিলতায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলেও স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্প গোষ্ঠীর ধারণা।
বরগুনা শহরের মধ্যে কোন শিশুপার্ক কিংবা পর্যটনকেন্দ্রিক স্থান না থাকায় এখন বিসিক শিল্পনগরীমুখী নানা শ্রেণীর মানুষ। সাথে করে নিয়ে আসছে ছোট কোমলমতি শিশু ও অর্ধাঙ্গিনীকে। মনকে পুষ্পরিত করতে এখন একমাত্র স্থান বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে গড়ে ওঠা কাশবন।
স্থানীয়দের দেয়া নামানুসারে দিয়াবাড়ি নামেই খ্যাতি অর্জন করেছে বরগুনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ক্রোক এলাকার বিসিক শিল্প নগরী। ১০.২০ একর জায়গা জুড়ে বিসিক শিল্পনগরীর দ্বোতলবিশিষ্ট একটি অফিস কার্যালয় ও আরেকটি একতলা ভবন ছাড়া সবই কাশফুল দিয়ে ঢাকা। কাশফুলের আড়ালে ঢেকে রয়েছে বিসিক শিল্পনগরীর বিলবোর্ডটিও।
চোখ বুলাতে গেলে ঠিকই জায়গাটি রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত দিয়া বাড়ির শুটিং জোন বলে মনে হবে, পড়তে হবে এক সৌন্দর্যের অভয়ারণ্য কাশবনের প্রেমে। মূল ফটকের পরে বর্গক্ষেত্র আকৃতির দুই জায়গা ধরে চারটি ও শাখা হিসেবে রয়েছে চারটি রাস্তা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কাশের সাথে প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সকলেই মোবাইলের ক্যামেরায় নিজেকে বন্দী করছে। কখনো একা আবার কখনোবা বন্ধুদের সাথে একই ফ্রেমে আটকে যাচ্ছে।
কয়েকদিন ধরে বিসিক শিল্পনগরীতে গড়ে ওঠা সাময়িক কাশবনের এ উদ্যানে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা যায়নি। উদাসীনতা দেখা গেছে বিসিক শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের চোখেমুখে। কেবল বিকেলের আলোয় নয়, সকাল আর দুপুরকেও হারিয়ে দিয়েছে বিসিক শিল্পনগরীর কাশবনের কাশফুল।
ক্রোক এলাকার নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান- ক্রোক এলাকার বাইরে থেকে আসা শহর ও শহরতলীর আনন্দ পিপাসুদের মধ্যে কয়েকজন ব্যক্তি বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা কাশবনের সুযোগ নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে লিপ্ত হবার ঘটনা ঘটেছে।
তারা বলছেন-বিনোদনের স্বার্থে যুগলরা আসতেই পারে এই স্থানে। যেমন করে আসছে নব্য বিয়ে করা দম্পতি, কেউবা তার ছোট্ট সন্তানটিকে কোলে নিয়ে। এটা একটি মাধুর্যমন্ডীত দৃশ্য বটে। তবে অন্য বিষয়গুলো অকল্পনীয় নিঃসন্দেহে। সবটা ঠিক থাকলেও এমন ঘটনার বিহীত হওয়াটা জরুরী। তবেই একটি ভিন্ন পরিবেশ ফিরে পাবে বাস্তবে মন সতেজ করতে আসা আনন্দপিপাসুরা।
বরগুনার স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন- বিগত দিনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর কথা মনে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ঘটে যাওয়া নানা ধরনের অকল্পনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোকে। বরগুনার নিকটবর্তী এলাকা গোলবুনিয়া পর্যটন হিসেবে গড়ে ওঠা স্থানটিতে গতবছর হৃদয় নামের একটি ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি প্রেমীক নিয়ে ঘুরতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে।
তারা বলছেন- বিনোদনের কোন স্থান না থাকায় সুন্দর ও মনোরম পরিবেশকে ভালোবেসে স্থানীয়দের ঘুরতে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিতে হবে। নাহলে সাময়িক আনন্দ সারাজীবনের কান্না হতে পারে একটি পরিবারের সদস্যদের জন্য।
এ বিষয়ে বরগুনা বিসিক শিল্পনগরীর ডেপুটি ম্যানেজার (ডিএম) কাজী তোফাজ্জেল হক বলেন- শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণে ত্রুটি নেই। কেননা শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠা করতে হলে নগরী বিষয়ক দপ্তর প্রয়োজন। বরগুনায় এখন পর্যন্ত নগরী বিষয়ক দপ্তরে জনবল এসে পৌঁছেনি।
বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে গড়ে ওঠা কাশবনে ঘুরতে যাওয়া সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- আমি পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করেছি। তবুও কিছু কিছু সময় সাধারণ মানুষ প্রবেশ করে থাকে। নিরাপত্তার বিষয়টি আরও জোরদার করা হবে বলেও তিনি জানান।
বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ কে,এম, তারিকুল ইসলাম বলেন- বিসিক শিল্পনগরী এলাকা মূলত পর্যটনকেন্দ্র নয়। কাশফুলের কারনে দৃষ্টি নন্দন জায়গা হওয়ায় বরগুনার মানুষ সেখানে ঘুরতে যাচ্ছে।
যেহেতু জায়গাটি নিরিবিলি পরিবেশ, সে ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে জায়গাটি সেফ জোনের আওতায় এনেছি।
বিসিক শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখলে জায়গাটি আরও নিরাপদ থাকবে বলে মনে করছেন তিনি।