শিরোনাম

South east bank ad

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে শিক্ষানগরী রাজশাহী

 প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :

করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত পদ্মাপাড়ের রাজশাহী শহর যেন একেবারে নিস্তবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তবে গতকাল রবিবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ায় যেন প্রাণ ফিরে পেল উত্তরের এই শহরটি। শিল্পকারখানা বিহীন এই পরিষ্কার-পচ্ছিন্ন নগরী যেন শিক্ষার্থীদের কাছে পেয়ে পুরনো রুপেই ফিরছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- রাজশাহীকে বলা হয় ‘এডুকেশন সিটি’। পুরো শহরটিকে ঘিরে রেখেছে শুধুই স্কুল, কলেজ আর বিশ^বিদ্যালয়। আর তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের নিয়েই যেন আশা-ভরসা এই শহরের মানুষদের (ব্যবসায়ীদের)। একদিকে করোনার কারণে এমনিতেই বন্ধ ছিল শিক্ষানগরীর সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছিল বন্ধ। ফলে ‘ক্লিন ও গ্রীন সিটি’র সৌন্দর্য্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও অর্থনৈতিক দ্বৈন্যদশায় একেবারে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষদের। কিন্তু গতকাল রবিবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ায় বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের মাঝে অনেকটা প্রাণ ফিরে এসেছে।

এদিকে বিশ^বিদ্যালয় ও বিশ^বিদ্যালয় কলেজগুলো এখন না খুললেও ইতোমধ্যেই স্বশরীরে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ফলে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল, রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়, নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউভার্সিটি বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখন অবস্থান করছে শিক্ষানগরী রাজশাহীতে। যার কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার হালে পানি পেতে শুরু করেছে। হাসি ফুটতে শুরু করেছে তাদের মলীন চেহারায়।

রাজশাহী নগরীর আরডি এ মার্কেটের এক প্লাস্টিকের দোকানে প্লাস্টিকে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার মো. শাহরিয়ার শুভ। রবিবার সকালে শুভর দোকান থেকে মেসের খাবারের প্লাস্টিকের বাটি কিনছিলেন দুজন শিক্ষার্থী। তাদের একজন বললেন, ‘মামাদের (ব্যবসায়ীদের) আর চিন্তার কারণ নেই। আমরা এসে গেছি।’ শুভ বললেন, বাইরের মানুষ ছাড়া রাজশাহী শহর অচল। এটা গত দেড় বছর অচলই ছিল। কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে আসছেন। মেসও খুলে যাচ্ছে।

রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, দেড় বছর ধরে রাজশাহীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খুবই অসহায় জীবন যাপন করেছেন। বিধিনিষেধের মধ্যে দোকানপাট খোলার সুযোগ এলেও এখানকার ক্রেতাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীনির্ভর এই শহরে তাঁরা না থাকায় ব্যবসায়ীরা আর ব্যবসা করতে পারেননি। এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আয়োজনে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে আসছেন। তাঁরা কেনাকাটাও শুরু করেছেন।

রাজশাহী নগরের সোনাদীঘি মোড় এলাকায় সমবায় মার্কেট। এখানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় লেখাপড়ার সামগ্রী বিক্রি হয়। রোববার সকালে এই মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় খাতা-কলম, জ্যামিতি বক্স, প্র্যাকটিক্যাল খাতা, রংপেনসিল কিনছেন। সঙ্গে তাঁদের অভিভাবকেরাও এসেছেন।

এই মার্কেটের ব্যবসায়ী আয়নাল হক বলেন, তাঁরা বিক্রি করেন শিক্ষাকার্যক্রমে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। দেড় বছরে খুব বেশি বিক্রি হয়নি। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি বেশ বেড়ে গেছে। গ্রামের ছোট ছোট দোকানের জন্যও ব্যবসায়ীরা কলম-খাতা বেশি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

অটোরিকশাচালক লিটন মিয়ার (৪০) বাড়ি নগরের কাজলা এলাকায়। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা না থাকায় গত দেড় বছর অটোরিকশা চালিয়ে খুব বেশি আয় করতে পারেননি। সংসার চলেছে খুব কষ্টে। বিধিনিষেধে রাস্তায় বের হতে না পারলেও কারও কাছে তিনি হাত পাতেননি। তবে প্রচুর ধারদেনা করে ফেলেছেন। এবার সেগুলো শোধ করবেন। কারণ, এবার শিক্ষার্থীরা ফিরছেন।

রাজশাহী শিক্ষা অফিস সূত্র বলছে- রাজশাহীতে সরকারি প্রথামকি বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৫৮টি। এই সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী দুই লাখ ৫৮ হাজার ৯০৬ জন। এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪৭টি। এর শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। সবমিলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘রাজশাহীতে ওইভাবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। আগে থেকেই এই শহরকে বলা হয় শিক্ষানগরী। শিক্ষার্থীদের ওপর ভর করেই এই এলাকার মানুষজন জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনার ভয়াল-ছোঁবলের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়ে এখানকার মানুষজন। তবে রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় শিক্ষানগরীর রাজশাহীর জনগণের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন তাদের ব্যবসায়ীক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।’

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: