কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা’
বহুকাল ধরেই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে হিজড়া, লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় ও রুপান্তরিত লিঙ্গের মানুষেরা। এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সমাজে সচেতনতার অভাব আছে।
এ কারণে শারীরিক ও মানসিক সব সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। পাশাপাশি সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হয়।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে তাদের অবস্থানও ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে। ক’দিন আগেই আমরা দেখেছি দেশের প্রথম সংবাদ পাঠক হিসেবে রূপান্তরিত লিঙ্গের একজনকে। যা দুই দশক আগেও ভাবা যেত না।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এই জনগোষ্ঠীর কঠিন বাস্তবতায় পরিবর্তনের জোয়ার আসছে। এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে বিশেষ কর প্রণোদনার বিধান প্রবর্তনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার।
সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও হিজড়া, লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় ও রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষের সহায়তায় কাজ করছে। অনলাইনে খাবার ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডা সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গের প্রায় ২০ জনকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে রাইডার ও ওয়্যারহাউজ স্টাফ হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।
লৈঙ্গিক পরিচয় কারও কাজ করার সক্ষমতা কমিয়ে দেয় না। কিংবা তাকে অযোগ্য করে তোলে না। বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরে সমাজে রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে কাজ করার প্রচেষ্টায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তৃতীয় লিঙ্গের এক রাইডার হলেন সুমন (ছদ্মনাম)। শত চেষ্টা করেও তিনি অতীতে কোথাও ভালো মানের চাকরি করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আগে আমি যে ধরনের কাজ করতাম, তাতে অনেক অবজ্ঞা-অবহেলা সহ্য করতে হত।’
‘তবে বর্তমানে আমি আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সমাজে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারছি। আমার মতো অন্যরাও আর্থিক স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে সমাজে উঠে দাঁড়াক এমনটাই প্রত্যাশা করি।’
করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের অনেকেই আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছেন। হিজড়া ও রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের ক্ষেত্রে এই সঙ্কট আরও তীব্র।
এমনই একজন রাইডার বলেন, ‘করোনায় আমি চাকরি হারায়। কোথাও কাজ না পেয়ে একসময় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন আমি স্বাবলম্বী।’
সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আনা গেলে রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষদের অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।