‘আমরা উচ্ছাসিত, উন্মুখ হয়ে আছি স্কুলে যেতে’
এম, নুরুন্নবী, (তজুমদ্দিন) :
দশম শ্রেনির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। প্রাইভেটে এসে দেখেন প্রিয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মাচারীরা মিলে ব্যাপক উৎসাহ ও আমেজ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। তা দেখে তারও আর তর সইছেনো। কয়েকজন বান্ধবী নিয়ে নেমে যায় নিজের প্রিয় শ্রেনি কক্ষের বেঞ্চগুলো মোছার কাজে। কথা হয় ফারজানা চৌধূরী শাওন বালিকা (মাধ্যমিক) বিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীর সাথে। সে তারা জানায়, ‘‘বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা প্রাভইভেট পড়তে এসেছিলাম। স্কুলে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগছে, আমরা উচ্ছাসিত। উন্মুখ হয়ে আছি স্কুল খোলার দিনের অপেক্ষায়।” অষ্টম শ্রেণির প্রাপ্তি নন্দি জানায়, আপাতত গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়েই আমাদের সিলেবাস শেষ করতে হচ্ছে। এখন স্কুল খোলার খবর পেয়েছি, এটা শুনে অনেক ভালো লাগছে। আশাকরি ক্লাসে ফিরতে পারলে আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো। ”
ঠিক এভাবেই ভোলার তজুমদ্দিনের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি। আগামী রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) হতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান শুরু করার সরকারী ঘোষনার পরপরই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচ্ছন্নতাসহ শ্রেণিকক্ষ প্রস্তুতের কাজ চলছে। বিদ্যালয়গুলোতে বৈদ্যুতিক ফ্যান-বাতি সংস্কার, আসবাবপত্র মেরামত ও ধোয়া মোছা, আঙ্গিনায় পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে শম্ভুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটোতে উৎসবের আমেজ। প্রধান শিক্ষক মোঃ জামাল উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে কর্মাচারীরা নিজেরাই বিদ্যালয়ের বেঞ্চ, টেবিল ও অন্যান্য আসবাবপত্র ধোয়া মোছার কাজ করছেন। প্রধান শিক্ষক মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, সুন্দর ও সঠিক সময়ে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমরা সরেকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনেই ক্লাস চালু হবে। এজন্য আমরা গত ২-৩ দিন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কর করছি।
ফারজানা চৌধূরী শাওন বালিকা (মাধ্যমিক) বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষক ও অফিস সহায়করা মিলে উৎসাহের সাথেই আনুষাঙ্গিক কাজ করছেন। এক শিক্ষককে দেখা গেছে নিজেই পানির পাম্প দিয়ে শ্রেণি কক্ষ পরিস্কার করছে। আবার কেউ জীবানুনাষক স্প্রে ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা পরিস্কার করছেন। কেউ আবার প্রস্তুত করছেন অনেক দিনের পুরানো হাজিরা খাতা ও বিভিন্ন কাগজপত্র। এ বিষয়ে বিদ্যালটির প্রধান শিক্ষক মোঃ নুর নবী জানান, শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। যদিও সরকার অনলাইন ক্লাস, সংসদ টিভি ও এ্যাসাইনমেন্ট মুল্যায়নের এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। শ্রেণিকক্ষকে স্বাস্থ্যসম্মত পাঠদান উপযোগী করে তোলা হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ‘সুস্থ্য থাকি’ নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহন করে আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার কাজ করবো। এজন্য সরকারের কাছে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি সুস্থ্য থাকার জন্য আরো ভালো পরিকল্পনা ও বাজেট প্রদান করার দাবী করছি।
উপজেলা (মাধ্যমিক) শিক্ষা অফিসার মোঃ মওকত আলী জানান, তজুমদ্দিন উপজেলায় ৩ টি কলেজ, ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫ টি মাদ্রাসা ও ১১০ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মহামারি করোনার কারেনে গত বছরের ১৮ র্মাচ হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। র্দীঘ প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি সরকার এক প্রজ্ঞাপনে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর হতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দেয়। এলক্ষ্যে সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পাঠদান শুরু করার প্রস্তুতি চলছে।