শিরোনাম

South east bank ad

মা-সন্তানদের মিলনের দৃশ্য গোটা গ্রামের মানুষকে কাঁদিয়েছে

 প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :

২২ বছর পর সন্তানরা ঠাঁই পেয়েছে মায়ের বুকে। পরম মমতায় মা আমেনা কাছে টেনে নিয়েছে সন্তানদের। মা-সন্তানদের মিলনের দৃশ্য গোটা গ্রামের মানুষকে কাঁদিয়েছে।

বর্তমানে আমেনা বেগমকে দেখতে ধুনট উপজেলার ছোটচাপড়া গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। তবে এ ঘটনা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছর পর হারানো আমেনা খাতুনকে ফিরে পেয়েছেন তার স্বজনরা। সোমবার রাতে নেপাল থেকে দেশে ফিরে জন্মভুমির মাটি স্পর্শ করেছেন তিনি। তাকে দেখতে উপজেলার ছোটচাপড়া গ্রামের বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছেন অনেকে। মাফে ফিরে পেয়ে খুশি হয়েছে সন্তানসহ স্বজনরা।

একদিন দুইদিন নয়, ২২ বছরের অপেক্ষার অবসান। এরই মধ্যে বদলেছে অনেক কিছুই। শুধু বদলায়নি মায়ের প্রতি সন্তানদের নাড়ি ছেড়ার টান। যেখানে এক সঙ্গে লেপ্টে আছে দুঃখ কষ্ট আর আনন্দ। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তার। মা তার কিছুই আঁচ করতে পারছেন না। কথাও বলছেন অসংলগ্ন, বয়সটা যে বেড়ে এখন আশির ঘরে। লোপ পেয়েছে ২২ বছর আগের অনেক কিছুই। কিভাবে নেপালে পৌছে ছিলেন, সেই স্মৃতিও সঠিকভাবে মনে করতে পারছেন না তিনি। তাই নেপাল থেকে দেশে স্বজনদের কাছে ফেরার গল্পটাই ছিল যে অলৌকিকতার ছোঁয়া।

কিভাবে বাড়ি থেকে নেপালের সুনসারিতে পৌছান আমেনা খাতুন, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। তারপরও আমেনা খাতুনের অসংলগ্ন কথা বার্তায় যতটুকু জানা যায়, তা হচ্ছে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম হয়ে ভারতে পৌছান। তারপর দুর্গাপূজার মধ্যে ভারত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে নেপালের সুনসারি জেলার ইনারোয়া শহরে পৌছে বাসাবাড়ি ও হোটেলে কাজ করতেন। বার্ধক্যের কারণে তিনি কাজ করতে না পেরে রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অবস্থান করছিলেন। পরে ইনারোয়া পৌরসভার কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সুনসারি জেলা প্রশাসনের সেফ হাউসে রেখেছিলেন। তবে দেশে ফিরে স্বজনদের পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমেনার স্বামী আজগর আলী প্রামাণিক পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। অনেক আগেই মারা গেছেন তিনি। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর, মেজ ছেলে ফটিক হোসেনের বয়স ৫৮ বছর, ছোট ছেলে ফরাজুল হোসেনের বয়স ৫৪ বছর ও ছোট মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৪৫ বছর।

মানসিক ভারসাম্যহীন আমেনা ৫৬ বছর বয়সে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন। স্বজনরা ধরেই নিয়েছিলেন তিনি আর জীবিত নেই, মারাই গেছেন। কিন্ত প্রায় তিন মাস আগে নেপালের সুনসারি এলাকায় তার সন্ধান পায়। এরপর বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় তার পরিবারের খোঁজ মেলে। পরে নেপালে বাংলাদেশের দূতাবাস তাকে উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারি খরচে সোমবার রাতে নেপাল থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছেন তিনি।

আমেনার ছেলে আমজাদ হোসেন বলেন, আমার মা আগে থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ২২ বছর আগে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন। তিন মাস আগে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানতে পারি, নেপালে মাকে পাওয়া গেছে। এরপর তাকে সরকারি খরচে দেশে ফেরানোর জন্য আবেদন করি। নেপালে বাংলাদেশের দূতাবাস তাকে দেশে ফিরে এনে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। মাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। বাকী জীবনটা মা আমার কাছেই থাকবেন।

আমেনার বোন জরিনা খাতুন বলেন, ছোট বেলা থেকেই পাগলের মতো আবোল তাবোল কথা বলতেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর বাড়িতে ফিরে আসায় আমারা অনেক খুশি হয়েছি।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: