South east bank ad

‘মৃত’ আমেনা ২২ বছর পর নেপাল থেকে দেশে ফিরলেন

 প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :

বগুড়ার আমেনা খাতুন (৮০) নামের এক নারী নিখোঁজ হওয়ার ২২ বছর পর নেপাল থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন। তিনি সোমবার দুপুর ১টার দিকে নেপালের একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। সরকারি সহযোগিতায় বিনা খরচে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমেনার নাতি আদিলুর রহমান আদিল। দীর্ঘ কয়েক বছর তার কেনো খোঁজ না পাওয়ায় তার সন্তানদের ভোটার আইডিতে মায়ের নামের আগে মৃত উল্লেখ করেছেন।

আমেনার নাতি আদিল জানান, আমেনা খাতুন প্রায় ৪০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে তার আগে তিনি আমজাদ হোসেন, ফটিক মিয়া ও ফরিদ মিয়া নামে তিন ছেলের জন্ম দেন। এরপর তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর আম্বিয়া নামের তার আরেক মেয়ের জন্ম হয়। ১৯৯৮ সালে ফটিক মিয়া সৌদি আরবে যান। ওই দিন ফটিক মিয়া ঢাকায় যান। এই সময়ে আমেনা খাতুনও বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর আর তার কোনো খোঁজ মেলেনি। তখন থেকে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো তিনি মারা গেছেন।

তবে গত রোজার ঈদের আগে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) লোকজন আমেনা খাতুনের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, আমেনা নেপালে রয়েছেন। এরপর তার ছবি দেখায় তারা। ছবি দেখে আমেনা খাতুনের সন্তানেরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। এরপর গত শুক্রবার নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম আমেনার সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। ভিডিও কলে আমেনা তার সন্তান ও স্বজনদের চিনতে পারেন।

এ বিষয়ে মাসুদ আলম শনিবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন, নেপালে ২২ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন বগুড়ার আমজাদ হোসেন প্রমাণিক। ২২ বছর আগে বগুড়ার ধুনটের আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে অভিমান করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তার ৩ ছেলে ১ কন্যা সন্তানেরা তাকে খুঁজে না পেয়ে ধরে নিয়েছিলেন যে তাদের মা আর বেঁচে নেই । তাদের ভোটার আইডিতে মায়ের নাম পূর্বে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত আমেনা বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। তার বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স এখন ৬০ বছর। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের তত্বাবধানে একটি বিশেষ বিমানে নেপাল থেকে ঢাকায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

মাসুদ রানা ফেসবুকে আরও বলেন, আমি নিজেও একই বিমানে ঢাকায় আসব। ৩০ মে নেপালে সুনসারি জেলার ‘জি মুক মেহতা’ তার ফেসবুকে ইনারোয়া পৌরসভার ডেপুটি মেয়র যমুনা গৌতম পোখরেলের তত্ত্বাবধানে উদ্ধারকৃত একজন বাংলাদেশের নারী রয়েছে উল্লেখ করে একটি পোস্ট করেন। এরপর মাসুদ রানা ফোনে আমিনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরবর্তীসময়ে রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে ১ জুন কাঠমুন্ডু থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সুনসারিতে গিয়ে আমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে তার ঠিকানা উদ্ধার করে বগুড়া জেলা অফিসের প্রচেষ্টায় তার ঠিকানা ও পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হই। এসময় ইনারোয়াতে মাসুদ রানাতে সহায়তা করেন সুনসারি বাঙালি সমাজের সভাপতি বিপ্লব ঘোষ।

সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপাল থেকে এই বৃদ্ধ অসহায় নারীকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পাঠানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের তার দেশের নাগরিক ও প্রবাসে অসহায় মানুষে প্রতি দ্বায়িত্ব ও এবং কর্তব্য পালনের একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত।

আমেনার নাতি আদিল বলেন, সোমবার দুপুরে দাদীকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি আমরা।

জানতে চাইলে বগুড়া এনএসআইয়ের উপপরিচালক মুজাহারুল ইসলাম মামুন বলেন, নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলমের তথ্য পেয়ে আমরা ওই নারীর ঠিকানা খুঁজে বের করি। এবং মাসুদ আলমের দক্ষতা ও বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কারণে ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: