৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ
অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে দেশের নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। ভর্তি বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, অস্তিত্বহীন ক্যাম্পাস, সনদ বিক্রি, প্রতারণা, মানিলন্ডারিং, শিক্ষককে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করা প্রধান অভিযোগ। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণ হলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি
ইউজিসি সূত্র জানায়, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় নর্থ-সাউথের বিরুদ্ধে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্রকে। আর সদস্য সচিব হলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মাহমুদুল আলম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ কমিটিকে ১৬ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, ইউজিসি থেকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তথ্য-প্রমাণ চেয়েছে। আমরা সেসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তা পাঠিয়ে দেবো।
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রোগ্রামে অনুমোদিত আসন সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ১ আগস্ট ইউজিসি থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আলীম দাতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লিডিং ইউনিভার্সিটি
সিলেটে অবস্থিত লিডিং ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েকজন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে অবৈধভাবে ৪৭ কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করেছেন।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ২৪ আগস্ট চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এরই মধ্যে তদন্তকাজ শেষ হয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার কাওসার হাওলাদার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠতে পারে। বিষয়টি ইউজিসি খতিয়ে দেখছে।
প্রাইম এশিয়া
এদিকে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির সাবেক বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এম এ খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ২৩৭ কোটি সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের। বিষয়টির তদন্ত করছে চার সদস্যের একটি কমিটি। গত বছরের ১৪ নভেম্বর এ বিষয়ে কমিটি গঠন করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা আটকে আছে বলে জানা যায়।
আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি
‘আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া, ইউএসএ’ নামে ভুয়া স্ট্যাডি সেন্টার ও ওয়েবসাইট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অথচ এর কোনো অস্তিত্বই নেই। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ১৮ মার্চ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যদের সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া
গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার বিরুদ্ধে। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারসহ জাল সনদ বিক্রি, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ অর্জনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। গত ১৪ এপ্রিল এ কমিটি করা হলেও তারা এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ১০ শিক্ষককে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করার। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে তা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এটি সিলেটে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আর্থিক, প্রশাসনিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৮ মে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা
দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার বিরুদ্ধে জাল সনদ বিক্রি, কমিশনের অনুমতি ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, অনুমোদনহীন ক্যাম্পাস পরিচালনা, প্রতারণা ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ উঠেছে। এটি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ইউসিজি। গত ১৯ মে এ কমিটি গঠন করা হলেও এখনো তদন্ত কাজ শেষ হয়নি বলে জানা যায়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এগুলো খতিয়ে দেখতে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দেওয়া হবে প্রতিবেদন। যাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও সার্টিফিকেট বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি। অন্য বিষয়ের তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
ইতোমধ্যে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সূত্রঃ জাগো নিউজ