ফলোআপ : অবশেষে সেই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বদলির আদেশ
মো: আব্দুস ছাত্তার, (ফুলবাড়ীয়া) :
বহু আশা-প্রত্যাশা, চেষ্টা-তদবির উপেক্ষা করে বহুল আলোচিত, সমালোচিত ফুলবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: আবুল কালাম আজাদ কে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ১সেপ্টেম্বর ঐ প্রজ্ঞাপনে ৮জন কর্মকর্তাকে বদলী/পদায়ন করা হয়। ক্রমিকের ৭নম্বরে বলা হয় মো: আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, ফুলবাড়িয়া (উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, মদন নেত্রকোণা এ বদলির আদেশাধীন) কে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসাবে বদলী করা হয়।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘ঘুষ নয়, হাদিয়া নেন ফুলবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হয়। এরমধ্যে বদলীর এক প্রজ্ঞাপনে ২৪জন কে বদলী/পদায়ন করা হয়। করোনাকালীন সময় তিনি বিভিন্ন অজুহাতে প্রথম বদলীর কর্মস্থল নেত্রকোণার মদন উপজেলায় যোগদান করেন নি তিনি।
প্রথমত ফুলবাড়িয়ার কর্মস্থলে ৩বছর পূর্ণ হয়নি। দ্বিতীয়ত তিনি দারুনভাবে অসুস্থ। তৃতীয়ত উপজেলা নির্বাচন অফিসার মুস্তফা কামাল কে দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিজেকে রিটার্নিং অফিসার বানিয়ে তা শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন কারণ ই শিক্ষা অধিদপ্তরকে নমনীয় করতে পারেনি। ফলে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় তৃতীয়বার তার আসা নিরাশা হয়ে যায়।
bdfinancialnews24-6c6259.ingress-earth.easywp.com সহ বিভিন্ন দৈনিকে ‘ঘুষ নয় হাদিয়া নেন ফুলবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার’ শিরোনামে অনলাইনে নিউজ প্রকাশ হওয়ার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সহ তিনি যে সব ক্লাবের সাথে জড়িত তাদের দিয়ে একটি প্রতিবাদ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কোন চেষ্টাই আলোর মুখ দেখেনি। আমাকে সম্মানিত শিক্ষকদের দিয়ে অনেক তদবির করার চেষ্টা করেছিলেন আমি তাঁদের একটি কথাই বলেছি, কোন অংশ, কোন বাক্য, কোন শব্দের প্রতিবাদ দিবেন সেটি আমাকে স্পষ্ট করতে হবে। তাঁরা সেটি বলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত উনারা বলেছিলেন, মানবতা। কিসের মানবতা? কাকে মানবতা দেখাবো? একজন নাইট গার্ড পদে চাকরি করবে, সবাই মানবতা দেখিয়ে তাকে চাকরি দিচ্ছে অথচ সেখানেও উনি ৫০হাজার টাকার নিচে স্বাক্ষর করেননি। কোন হেড মাস্টার নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ করলে, তাঁকে বলতেন- ওর (প্রার্থী) নাম্বারটা দেন? মোবাইল নম্বর নিয়ে উনি নিজেই ফোন দিতেন? নিউজে আমি কোন ভাবেই ছাড় দেইনি। উনি হয়তবা অনেক আক্ষেপ করতে পারেন? কিন্তু আমার করার কিছুই ছিল না? এ নিউজের যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে ছিল। তারা স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন কারণ শিক্ষকরা এতটাই ক্ষুদ্ধ ছিলেন তাঁর প্রতি। প্রকাশ করতে পারেননি, কারণ উনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা!
এ ছাড়াও তাঁর একজন সহকর্মী বেলায়েত হোসেন যিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসাবে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসে ৩০জুলাই যোগদান করে ফুলবাড়িয়ায় অফিস করছেন, তাকে তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। ১৮জুলাই এর প্রজ্ঞাপনের মতে ১আগস্ট অটো রিলিজ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম। অথচ অর্ডার হওয়ার পরও লকডাউনের দোহাই দিয়ে তিনি থাকার চেষ্টা করে বদলী ফিরানোর চেষ্টা করেন। জুলাই মাসে ননএমপিও দের এমপিও এর আবেদন করেছিলেন যারা, তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ১৪আগস্ট রাত ১২টার মধ্যে প্রেরণের কথা, সেই লোভ সামলাতে না পেরে তিনি ১৪ আগস্ট রাতে ফুলবাড়িয়ায় এসেছিলেন এবং যারা হাদিয়া দিয়েছিলেন, তাদেরটা ফরওয়ার্ড (আবেদন) করেছেন। ঐ রাতে হাদিয়া নিয়ে দেখা না করার কারণে এমপিও এবং বকেয়া বিল থেকে বাদ পড়েছেন অনেক শিক্ষক-কর্মচারী।
পলাশ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম আব্দুস ছাত্তার বলেন, আমার নিজের বকেয়া বিলের জন্য ২বার আবেদন করা হলেও তিনি রিজেক্ট করে দেন। কারণ তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন। আমার প্রতিষ্ঠানের অপর সহকারী শিক্ষক আবেদন করা হয়েছে সেটিও তিনি ফরওয়ার্ড করেননি। এক কর্মচারীর বিলের জন্য ৫বার আবেদন করলেও তিনি আবুল কালাম আজাদ ৫বারই রিজেক্ট করেন।
বদলি নিয়ে অনেক শিক্ষক কে ফোন করে বলেছেন, আবারও আসছি, দেখা হবে অমুক শিক্ষকের সাথে। এসবই আদর্শ কোন কর্মকর্তার আচরণ হতে পারে না।
চাকরি বদলীযোগ্য সিস্টেম এটা মানতে হবে। উনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে গিয়ে এর চেয়ে ভালো কিছু করবেন? এমনটি প্রত্যাশা অত্র উপজেলার শিক্ষকসমাজের।