ময়মনসিংহে ব্যাংক ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্র গোলাবারুদসহ চার জঙ্গি আটক
রাসেল আহমেদ (ময়মনসিংহ) :
জঙ্গি সংগঠনের প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে ময়মনসিংহে ব্যাংক ডাকাতি করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র ৪ জন সক্রিয় সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাব। শনিবার ভোর রাতে ময়মনসিংহ শহরের খাগডহর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীর থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। এসময় র্যাবের সাথে জঙ্গিদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হচ্ছে, ময়মনসিংহের জুলহাস উদ্দিন ওরফে কাদেরী ওরফে মেহেদী (৩৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মদ রোবায়েদ আলম ওরফে রুব (৩৩), ময়মনসিংহের মোঃ আলাল ওরফে ইসহাক (৪৮) এবং রংপুরের মোঃ আবু আইয়ুব ওরফে খালিদ (৩৬)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১ টি ম্যাগাজিন, ৩ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৮ টি বোমা সদৃশ্য বস্তু, ৪ টি ব্যাগ, দরজা ও লক ভাঙ্গার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এবং একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা জব্দ করা হয়।
শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহে র্যাব-১৪’র সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যালএইড ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরে জঙ্গিদের বিভিন্ন গতিবিধি র্যাবের গোয়েন্দাদের নজরে আসে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার মধ্য রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর সদস্যরা অভিযানে নামে। নগরীর খাগডহর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হবার পর সেখানে গেলে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা গুলি ছুরে। গোলাগুলির পর র্যাব সেখান থেকে ৪ জঙ্গি সদস্যকে আটক করে।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা নিজেদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র এহসার সদস্য বলে পরিচয় নিশ্চিত করে। এই স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন জঙ্গি অপারেশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে। জঙ্গি সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগার করতে তারা ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয়। তারা সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় বলে জানায়। এ লক্ষে ৩১ আগস্ট তারা জামালপুরের মাদারগঞ্জে একটি গোপন আস্তানায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়। সেখান থেকে বর্ণিত অপরাধ সংগঠনে বাছাইকৃত ১০/১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ জঙ্গি দল গঠন করে। তারা ময়মনসিংহের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, এনজিও স্বর্ণলষ্কার দোকান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে একটি টার্গেট নির্ধারণ করে। সেসব প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামালপুরের জামতলা চর এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে যাত্রা শুরু করে। গোপনীয়তা বজায় রাখতে পথিমধ্যে তারা বিভিন্ন চরে যাত্রা বিরতি করে। শুক্রবার মধ্য রাতে তারা ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকায় পৌছায়। লুটকৃত অর্থ ময়মনসিংহের একটি এলাকার অপর একটি দলের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা ছিল।
আটককৃত জঙ্গি জুলহাস ওরফে কাদেরী ওরফে মেহেদী ডাকাত দলের নেতৃত্বে ছিল। দলের সদস্যদের ওয়াচম্যান, হাউজ ও লক ব্রেকিং, নিরাপত্তা প্রদান এবং লুটতরাজস
বিভিন্ন দায়িত্বে বন্টন ও বিভাজন করা হয়। গ্রেফতারকৃত রোবায়েদ এর সিটিটিভি ও তথ্য প্রযুক্তির বিষয়াদি দেখভাল করার দায়িত্ব ছিল।
জুলহাস জুলহাস ২০০৫ সালে মুক্তাগাছার একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করে। ২০০২ সালে জামালপুরে একটি মাদ্রাসায় দাখিল অধ্যায়ণরত অবস্থায় এক ট্রেইলার মাষ্টারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। মুক্তাগাছার একজন আঞ্চলিক নেতার অধীনে অপর ১০জনসহ সে জঙ্গিবাদে বায়াত গ্রহণ করে। সে সময় শীর্ষ জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও সালাউদ্দিন সালেহীনের সাথে তার পরিচয় ঘটে। সে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহের জঙ্গিদের গোপন আস্তানার সমš^য় সাধন করত বলে র্যাব জানিয়েছে।
আটক জঙ্গি রোবায়েদ ওরফে রুব
ময়মনসিংহের একটি কলেজ থেকে অনার্স পাস করে। পরে সে জেএমবি’তে যোগদান করে। ২০১৩ সালে ময়মনসিংহে একটি নাশকতা মামলায় বেশ কয়েকদিন কারা অন্তরীণ ছিল। ২০১৫ সালে সে ঢাকার একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ইংরেজীতে এমএ পাস করে। পরবর্তীতে সে কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামের উপর প্রশিক্ষণ নেয়। সে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও টেকনাফে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিল। সে শিক্ষকের ছদ্মবেশেও উক্ত এলাকা ও প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ প্রচার করত। সে জেএমবি সাইবার দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আটক জঙ্গি আইয়ুব ওরফে খালিদ (৩৬) উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (অনার্স) সম্পন্ন করে। ২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের সাইবার দলের প্রধানের মাধ্যমে জেএমবি’তে অন্তর্ভুক্ত হয়। সে উত্তরাঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে জেএমবি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। দ্রুততম সময়ে শিক্ষিতদের জেএমবি’তে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করে। ইতিমধ্যে সে পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নীলফামারিতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক, অটোচালক, টেইলার ইত্যাদি শ্রেণীর পেশাজীবীদের জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্ত করেছে। উত্তরবঙ্গের উক্ত জেএমবি নেতা তাকে বর্ণিত ডাকাতিতে নির্বাচিত করার জন্য শীর্ষ এক নেতার কাছে সুপারিশ করে।
আটক জঙ্গি আলাল ওরফে ইসহাক (৪৮) ২০১০ সালে জুলহাসের মাধ্যমে জেএমবি’তে অন্তর্ভুক্ত হয়। জুলহাস সহ যে দশজন একত্রে জেএমবি’তে বায়াত নিয়েছিল, সে তাদের বিশেষ সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করত। সাংগঠনিক প্রয়োজনে সে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জে সফর করেছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে মামলা করেছে।