মায়ের কেনা আইসক্রিম খাওয়া হলো না পপি'র
মো. রাকিব হোসাইন রনি, (লক্ষ্মীপুর) :
মায়ের কাছে বায়না করে ছিলো আইসক্রিম এনে খাওয়ানোর। মেয়ের এমন বায়না মেটাতে বাজার থেকে আইসক্রিম কিনে আনে মা। কিন্তু মায়ের কেনা আইসক্রিমটি আর খাওয়া হলো না ৭ বছরের শিশু পপির। রুমা নামের প্রতিবেশি এক ভাড়াটিয়ার স্বর্ণ লোভের বলি হতে হয়েছে তাকে।
ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের সাগরদি গ্রামের মানিক সাহার বাড়িতে।
আজ বৃহস্পতিবার (০২ সেপ্টেম্বর ) বিকেলে অভিযুক্ত প্রতিবেশীর ভাড়া ঘরে খাটের নিচে থেকে শিশু পপির মৃতদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশি রুমা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করা হয়েছে।
নিহত শিশু পপি একই বাড়ির সৌদি প্রবাসী নির্মল সাহা ও ববিতা সাহার বড় মেয়ে। তাদের সংসারে ৩ মাসের আরো একটি শিশু কন্যা রয়েছে। পপি স্থানীয় সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালের প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী। অভিযুক্ত রুমা কেরোয়া ইউনিয়নের তুফানী ব্যাপারী বাড়ির এমরানের স্ত্রী। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন সাগরদি গ্রামে মানিক সাহার বাড়ির পাশে আবুল কাশের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন।
স্বজন ও স্থানীয়রা জানান,শিশু পপির কানে তার মায়ের দেয়া তিন আনা স্বর্নের দুল ছিলো। ঘটনার দিন সকালে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করে শিশু পপি। মেয়েকে বাড়িতে রেখে আইসক্রিম কিনতে বাজারে যায় মা ববিতা সাহা। বাজার থেকে আসা পথে বাড়ির পাশে পপিকে দেখে আইসক্রিম খেতে বাড়িতে আসতে বলেন তিনি। কিন্তু পপিকে লোভ দেখিয়ে কৌশলে নিজের ঘরে নিয়ে যায় ভাড়াটিয়া রুমা। এসময় কানের স্বর্ণের দুল নিতে চাইলে সম্ভবত পপি বাঁধা দেয়। এতো ক্ষিপ্ত হয়ে শিশু পপিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চৌকির নিচে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখে। পরে স্বর্নের দুল নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যেতেও দেখেন স্থানীয়রা। এদিকে পপি আইসক্রিম খেতে বাড়ি না আসায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি শুরু করে স্বজন ও স্থানীয়রা। এসময় অভিনয় করে অভিযুক্ত রুমাও তাদের সাথে খোঁজাখুজি শুরু করে। পরে সন্ধেহের বশত স্থানীয়দের সহযোগিতায় খুঁজতে গিয়ে ভাড়াটিয়া রুমার ঘরে চৌকির নিচে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসানো অবস্থায় শিশু পপির মৃতদেহ দেখতে পান তারা। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা খবর দিলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়ের সহযোগিতায়ই অভিযুক্ত রুমা ও তার স্বামী এমরানকে আটক করে পুলিশ।
নিহতের চাচা রুপম সাহা অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত রুমা খারাপ মহিলা। স্বর্নের লোভে সে এ হত্যা কান্ডোর ঘটনা ঘটিয়েছে। হত্যাকারীর ফাঁসি দাবী করেন তিনি।
এদিকে খবর শুনে ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কে এম মোসতাক আহমেদ, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মুজিবুর রহমান ও সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার। তারা বলেন, ঘটনাটি খুবই নৃশংস ও হৃদয়বিদারক। শিশু পপি সাগরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী। দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবী করেন তারা।
এ ব্যাপারে রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুর জলিল বলেন, শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।