শেরপুরে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ
সাঈদ আহম্মেদ সাবাব, (শেরপুর) :
ঘোরা শখের বশে লালন পালন করে তাতে শোয়ার হয়ে মানুষ যায় এদিক-সেদিক। আবার ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার জনপ্রিয়তাও অনেক। সৌখিন মানুষরা ঘোড়ার গাড়িতে বসে একটু সময় কাটাতেও পছন্দ করেন। আবার মালামাল টানতেও ঘোড়ার গাড়ী ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করার দৃশ্য সাধারণত দেখা যায়না। এটি যেন রুপকথার মতো গল্প। কিন্তু রুপকথা নয় বাস্তবেই ঘোড়া দিয়ে হালচাষ হচ্ছে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লারপাড় ও বালুঘাটা গ্রামে। সেখানে ঘোড়া দিয়ে চাষাবাদ করার এক ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা এখনো চালু রয়েছে।
গোল্লারপাড় ও বালুঘাটা গ্রামে অন্তত ২০ জন আছেন যারা ঘোড়া লালন পালন করেন আর ঘোড়াকেই তাদের আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা বছরের কিছু সময় ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা নেয়া করেন। আবার ইরি-বোরো ও আমন মৌসুম চারা রোপন করার লক্ষে জমি সমান করার জন্য ঘোড়া দিয়ে দেয়া হয় মই। ঘোড়া দিয়ে মই দিলে এতে তারা একর প্রতি ৭/৮শ টাকা এবং প্রতি কাঠা ৪০/৫০টাকা। আবার জমি চাষ দিলে প্রতি কাঠা (৫ শতাংশ) এর জন্য ২শ টাকা পান তারা। এতে তারা বাড়তি আয়ও করে থাকেন।
ঘোড়া দিয়ে জমি হাল চাষকারী আকবর আলী জানান, এডা গরু কিনবার দরলে মেলা টাকা পরে গরুর দামের চেয়ে ঘোড়ার দাম কম। তাই একটা ঘোড়া কিনছি ঘোড়া দিয়েই হাল চাষ করি। ঘোড়ার শক্তিও মেলা। ঘোড়া দিয়া তারাতারি ও সুন্দরভাবে হাল চাষ করা যায়। আমি নিজের জমি চাষ করার পাশাপাশি অন্যের জমিও টাকার বিনিময়ে চাষ করে দেই। এতে করে তার ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা আয় হয়। প্রতিদিন তার ঘোড়ার খাবার বাবদ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হয়।
ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহকারী ইলিয়াস আলী জানান, ঘোড়া আমি ৬ বছর আগে ছোট সময় ১২ হাজার টাহা দিয়ে কিনছি। তারপর ঘোড়ারে আস্তে আস্তে সোয়ারি হিসেবে বানাইছি। ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতায় আমি এই ঘোড়া দিয়ে অংশগ্রহণ করেছি মেলাবার। ঘোড়া দিয়া মালামালও টানি। যখন আবার ইরি-বোরো ও আমন মৌসুম শুরু হয় তখন একটু রোজগারের জন্য চাষাবাদের কামও করি। মালামাল টানার চাইতে চাষাবাদের কাজে একটু রোজগার বেশি হয়। দিনে ঘোড়া দিনে ২/৩ একর জমি মই দেওন যা আরকি। আর আমরা প্রতি কাটা ৪০/৫০ টাহা নেই। আর প্রতি কুড় বা একর প্রতি ৭/৮শত টাহা নেই। আর জমিতে হাল দিয়ে নিলে নেই প্রতি কাটা ২শত টাহা করে। এতে করে তার ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাহা পাই। এতে আমাদের দিনে ভালাই কামাই হই।
জমির মালিক মো: সারোওয়ার হেসেন আপেল বলেন, আমরা একর প্রতি ৭/৮শত টাকা করে ঘোড়া দিয়ে মই দিয়ে নেই। ঘোড়া দিয়ে খালি মই দেই না হালওবাই কিন্তু আমরা হাল মেশিন দিয়ে দেই। কারণ মেশিনে হাল দিলে হাল তারাতারি হয়। আবার ঘোড়া দিয়ে মই দিলে জমি সুন্দর হয়। এতে ঘোড়া দিয়ে মই দিলে আমাদের যেমন সুবিধা ঘোড়া মালিদেরও সুবিধা।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড: মুহিত কুমার দেবনাথ বলেন, এক সময় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘোড়ার গাড়ীও প্রায় ওঠেই গেছে। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা রিয়ার দেখা যায় না। এখন যান্ত্রিক উপায়েই জমি চাষ করে কৃষকরা। তবে গোল্লারপাড়ে অনেকেই তাদের বাড়তি আয়ের জন্য ঘোড়া দিয়ে মই দেয় বা হালচাষ করে। বর্তমান আধুনিক যুগে যেখানে কৃষি চাষাবাদ হচ্ছে আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। কৃষি বিভাগ সমসময় আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করছে।