পানিবন্দী কয়েক হাজার মানুষ
খন্দকার রবিউল ইসলাম, (রাজবাড়ী) :
প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। রাজবাড়ীর তিনটি পয়েন্টে এখন পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যসূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার গতকাল ছিল ৩ সেন্টিমিটার এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে জেলার পাংশা উপজেলার সেনগ্রাম পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।গতকাল ২৪ আগস্ট থেকে প্রত্যোকটি পয়েন্টে ১/২ সেন্টিমিটার করে কমেছে।
পদ্মা নদীর এমন পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট, মিজানপুর, খানগঞ্জ, কালুখালীর রতনদিয়া, হরিণবাড়িয়া, পাংশার বাহাদুর ও হাবাসপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
পানি বন্দী মানুষ গুলো বিভিন্ন গবাদি পশু নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।তাছাড়া এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও।
পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি
রাজবাড়ী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক জানান, রাজবাড়ী ৫টি উপজেলায় ৭হাজার ৫শত ১৫টি পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ২৫৭টি পরিবার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৪টি উপজেলায় ২০টন, সদর উপজেলায় ৩৩টন চাউল এবং প্রতিটি উপজেলায় ২লক্ষ করে মোট মোট ১০লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।এ ছাড়া বন্যাকবলিত যে কোনও দরিদ্র পরিবার আর্থিক সাহায্য চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে কল করলে তাদের এ আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ডাক্তার বাচ্চু মোল্লা বলেন, ‘বিগত কয়েক দিনে এলাকার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। পানি বন্দী মানুষ গুলোর যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে।তারা নিজ খরচে বাঁশের একটা সাকো বানাইয়ে নিয়েছে। কিন্তু এই দিয়েও সমাধান হচ্ছে না।’
একই এলাকার পানিবন্দি নাছিমা খাতুন বলেন, ‘বন্যার পানি ওঠাতে আমরা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। রান্না বান্না করতে পারতেছি না। খাওয়া দাওয়ার কোনো ঠিকঠিকানা নাই। জানি না কবে এই সমস্যার সমাধান হবে।’
মিজানপুর ইউনিয়নের আব্দুল হালিম বলেন, ‘এই যে আমরা কয়েকদিন ধরে পানিবন্দী কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আসে নাই আমাদের খোঁজ নেওয়ার নিতে।’
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সালমা আক্তার বলেন, ‘আমরা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। সবসময় ভয়ে থাকতে হয় কখন ছোট বাচ্চা কাচ্চা পানিতে পড়ে যায়। এছাড়া সাপ আর পোকামাকড়ের উপদ্রপ তো আছেই।’
মিজানপুর ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষক মোঃ আকবর, আজ প্রায় ২মাস পানি বন্দী হয়ে আছি। কিন্তু কেউ আমাদের কোন খোঁজ নেয়নি। বর্তমানে স্ত্রী সন্তান কে নিয়ে চরম কষ্টে আছি।
কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের সলিম শেখ বলেন, ‘আমরা ঠিকমতন খাবার ও পানি পাচ্ছি না। আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে বন্যার পানিতে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আরিফুল হক জানান, পানিবন্দী মানুষের সাহায্যের জন্য প্রতি উপজেলায় ১০ মেট্রিকটন চাল পাঠানো হয়েছে।