মুন্সিগঞ্জে চিকিৎসা কেন্দ্রে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা
কায়সার সামির, (মুন্সিগঞ্জ) :
বৈশ্বিক মহামারি করোনা থাবায় রীতিমতো কাঁপছে বিশ্ব। দেশে আক্রান্ত সংখ্যা কমলেও ঝুঁকি রয়েছে অনেক বেশি। কিন্তু মুন্সিগঞ্জে মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি। যেখানে ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, করোনার মহামারি আবার যে কোনো সময় মারাত্মক রূপ নিতে পারে। সেখানে জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কেউ মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি। রোগী থেকে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিন ফিট দূরুত্বর কথা থাকলেও মাক্স ব্যবহারে অনীহা দেখা দিচ্ছে তাদের মধ্যে। বিশষজ্ঞেদের মতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেশি রয়েছে।
করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য মাক্স ব্যবহার নিশ্চিত করতে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার। সেখানে নীরব ভূমিকায় রয়েছে জেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নিয়মিত অভিযান ও জনসচেতনতা মূলক কোন কর্মকান্ড না থাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, শপিং মল, মার্কেট, সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, শপিং মল, মার্কেট, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, মানুষ জীবিকার তাগিদে অফিস আদাল এবং কেনা কাটা করছে কোন প্রকার স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়ায়। সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা, বেশিরভাগ মানুষ মাক্স পড়ছে না। এদিকে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী ডাক্তার দেখাতে আসে। সে সাথে স্বজনরাও। বেশির ভাগই রোগী ও স্বজনরা মাক্স বিহীন। হাসপাতালে প্রবেশ থেকে শুরু করে ডাক্তারের জন্য সিরিয়াল দ্বার পর্যন্ত কেউ মানছেনা স্বাস্থ্যবিধি। তিন ফিট দূরত্ব দূরের কথা, যেন গায়ের উপর উঠে যাচ্ছেন কেউ কেউ। কারো মধ্যে নেই কোন ধরনের সচেতনতা। না সাধারণ মানুষ, না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে নেই হেন্ড সেনিটাইজার ব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাট-বাচার ও চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে করোনাভাইরাস ছড়ার আশঙ্কা বেশি। করোনার সংক্রমণ রোধে মাক্স ব্যবহার অবশ্যই জরুরি, কেননা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়ায়। মাক্স ব্যবহার না করা হলে নব্বই শতাংশ আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। একই মাক্স দীর্ঘদিন সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে মাক্স ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আইন প্রয়োগে নিশ্চিত করা দরকার। সামাজিক দূরত্ব ও মাক্স ব্যবহারে অনীহা চলতে থাকলে খুব কম সময়ের মধ্যে জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
কথা হয় জেলার কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। মাক্স ব্যবহারের কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, কই! দেশে তো করোনাভাইরাস নেই। মাক্স পড়লে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাছাড়াও গরম লাগে।
কথা হয় দায়িত্বে থাকা কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে। তারা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে অনেকেই সচেতন ছিলো। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই মাক্স ব্যবহারে রোগীদের অসীহা দেখা দিচ্ছে। অধিকাংশ রোগী মাস্কবিহীন চিকিৎসা নিতে আসে। পেশা দায়িত্বের ফলে বাধ্য হয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হয়।
কথা হয় জেলার স্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদের সাথে। তিনি বলেন, মাস্ক ব্যবহার অনীহা ও অসচেতনতার ফলে চিকিৎসা কেন্দ্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। সে সাথে হাট বাজার থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও বেশি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইতি মধ্যে হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে স্বাস্থ্য সচেতনতা মানার ব্যাপারে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য মুন্সিগঞ্জে ২০ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৪৯১ জন। এর মধ্যে ১১ হাজার ১১৩ জন সুস্থ হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৯০ জন।