হয়নি কোন সুরাহা, জ্বলছে অবৈধ ইটের পাঁজা
এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা) :
বরগুনার তালতলী উপজেলায় গড়ে উঠেছে সরকারি সকল বিধির তোয়াক্কা না করেই মেনিপাড়ায় এএসআইএফ নামে ও নলবুনিয়ায় আরএএস এবং কেবিই নামে তিনটি ইটের পাঁজা।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে নেই কোন ধরণের অনুমতিপত্র। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোন ব্যবস্থাও চোখে পড়েনি। তবুও স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ও ক্ষমতাশীল দলের দোহাই দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অনুমতিহীন ও অবিচ্ছিন্ন ইটের পাঁজা।
এ পাঁজার কারনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীন রাস্তা, ধ্বংশ হচ্ছে জমির ফসল, প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। দেখাগেছে ছাড়পত্র থাকলেও অধিকাংশ ভাটার মালিকরা মানছেননা ভাটা স্থাপনের অন্যান্য শর্তসমূহ।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত দু'টি ইটের পাঁজা রয়েছে। একটির মালিক নলবুনিয়া ইউয়ন যুবলীগ সভাপতি রাসেল। অন্যটির মালিক বর্তমান তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের মামা পরিচয়দাতা বাচ্চু হাওলাদার। অন্যদিকে মেনিপাড়ায় বর্তমান মেম্বার মোস্তফার দাপটে চলছে ও জ্বলছে পাঁজা করে অবৈধ ইট পোড়ানোর ধূম। তবে তালতলী পাঁচশ বিঘা নামক স্থানে আবুল হোসেন গাজীর এইচবিএ ইটের ভাটায় লাইসেন্স থাকলেও কয়লার পরিবর্তে নিজস্ব স্ব-মিলে গাছ কেটে কাঠের জ্বালানিতে জ্বলছে ইট। এ যেনো নিয়মের মধ্যেও অনিয়মের জোয়ার বইছে।
সরেজমিনে দেখতে গিয়ে ইটভাটা আইনে পাঁজার কোন অনুমতি না থাকা সত্তেও কিভাবে পাঁজা করে ইট পোড়াচ্ছে জানতে চাইলে সংবাদ কর্মীদের মারধরের হুমকি ও গালাগাল করতে থাকে আরএএস পাঁজার মালিক রাসেল। স্থানে না থেকেও ফোন করে হুমকি দিয়েছে কেবিই পাঁজার মালিক বাচ্চু হাওলাদার। একই সঙ্গে ছাপছাপ জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসনের কোন অনুমতির প্রয়োজন তাদের লাগেনা। তবে সাংবাদিবদের সাথে সমঝোতায় আসবেন বলে জানিয়েছেন এএসআইএফ পাঁজার মালিক মোস্তফা (বর্তমান ওয়ার্ড মেম্বার)।
অথচ, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ সংশোধন প্রকল্পে প্রণীত আইনের ৩ নং এর ৫৯ নং আইনের ধারা ৪ এর প্রতিস্থাপনে বলা রয়েছে ইটভাটা জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহন ব্যতিরেকে, কোন ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না। ৪ এর 'ক' এ ইটভাটা ব্যতীত ইট প্রস্তুত কিংবা অন্য কোনরূপ ইটভাটা পরিচালনা কিংবা চালু করা যাইবে না। কিন্তু সেখানে ইটভাটাতো দুর; পোড়ানো হচ্ছে পাঁজা করে ইট। যার কোনভাবেই আইনে বর্দাস করেনা। অন্যদিকে 'ক' এর উপ-ধারা (২) এ বলা রয়েছে জেলা প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে ইট প্রস্তুতে মজা পুকুর,খাল,বিল বা খাঁড়ি দিঘি বা নদ-নদী বা হাওড়-বাওড় বা চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা হইতে মাটি কাটিতে বা সংগ্রহ করিতে পারিবে। কিন্তু ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে ইট তৈরি করা হচ্ছে। পরে এ ইট পাঁজা করে পোড়ানো হয়। যা কোনভাবেই আইন বৈধতা দেয়না।
এসকল ইটের পাঁজাগুলো ফসলী জমি, স্কুল, মসজিদ ও বসতবাড়ির ১ কিলোমিটারের মধ্যে। অথচ আইনের কোন ধারই ওই পাঁজা মালিকরা ধারছে না। এমন অবৈধ ইটের পাঁজার কারনে ক্ষতির মুখে এলাকাবাসী। ধ্বংশ হচ্ছে বন। কাঠ দিয়ে দেদার্ছে পোড়ানো হচ্ছে পাঁজা করা ইট। যার ফলে উজাড় হচ্ছে হাজারো বনাঞ্চল। এ যেনো প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চড়ে বেড়ানোর মতো।
পাঁজা তৈরি করে ইট পোড়ানোর ব্যাপারে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কাওছার হোসেন মুঠোফোনে জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ইট ভাটা পরিচালনার বাইরে পাঁজা স্থাপনের কোন ধরণের সুযোগ নেই। বিষয়টি জানলাম। অতি শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে তালতলী উপজেলার পাঁজাগুলো ধ্বংশ করা হবে। তবে এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ইটের পাঁজা আইনানুযায়ী অবৈধ। সুতরাং ইটের পাঁজা ধ্বংশ করতে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) অবৈধ ইটের পাঁজা ধ্বংশের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ চলবেনা।
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট থেকে সরকারি নম্বর ০৪৩১২১৭৭৫১৩ এ উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান সরকারের সাথে গত এক সপ্তাহে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোনটি রিসিপ্ট করেননি।