গৌরীপুরে ৭১’র ২১ আগস্ট ১৪ জনকে হত্যা করেছিল পাক-হানাদার বাহিনী
মশিউর রহমান কাউসার, (গৌরীপুর) :
১৯৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২১ আগস্ট পাক-হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে এদিন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালিহর গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এসময় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয় বেশ কয়েকটি বাড়িতে। পাক-বাহিনী ধরে নিয়ে যায় এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসিমের বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে স্থানীয় লোকজন এ দিনটিকে শালিহর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। প্রতিবছর ২১ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা, বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় লোকজন গণ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন এ বধ্যভূমিতে।
স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১’র ২১ আগস্ট পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা রেলযোগে গৌরীপুরে আসে। এদিন তারা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে পশ্চিম শালিহর গ্রামে হানা দিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসিমের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এসময় পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকে। এর আগে ১৬ মে ধরে নিয়ে যায় সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চার বাবা মধু সূদন ধরকে। তারা আজো ফিরে আসেন নি।
তাঁরা আরো জানান, পাক বাহিনী অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে কান্ত হয়নি এ গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে শালিহর কদমতলা নামক স্থানে ব্রাস ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে সেখানেই তাদেরকে কবর দেয়া হয়। পাক-বাহিনীর ব্রাস ফায়ারে গণশহীদরা হলেন- এ উপজেলার ২ নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালিহর গ্রামের মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নবর আলী, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনী কান্ত বিশ্বাস, খৈলাস চন্দ্র নমদাস, শত্রগ্ন নমদাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র নমদাস, কামিনী কান্ত বিশ্বাস ও রায় চরণ বিশ্বাস।
২০০৮ ইং সনে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মজিবুর রহমান ফকিরের হস্তক্ষেপে উল্লেখিত বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সনে জেলা পরিষদ সদস্য এইচএম খায়রুল বাসারের হস্তক্ষেপে স্মৃতিসৌধটি সংস্কার ও তাতে গণ শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। চলতি বছর (২০২১) গণপূর্ত বিভাগের অধীনে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে গণ শহীদদের স্মরণে একটি নতুন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।