শিরোনাম

South east bank ad

সড়কের পাশে ময়লার স্তূপ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌরবাসী

 প্রকাশ: ১৯ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

খন্দকার রবিউল ইসলাম, (রাজবাড়ী) :

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় গড়ে উঠেছে। দিন যতই যাচ্ছে মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তূপ ততই বড় হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজার, পাড়া-মহল্লার বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবেই বেছে নেওয়া হয়েছে মহাসড়ককে। ফলে শ্রীপুর বাস টার্মিনাল এলাকার বাতাস হয়ে উঠছে বিষাক্ত। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে উৎকট গন্ধে। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।বিশেষ করে স্কুল শিক্ষার্থীরাসহ পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। পৌরসভার অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে টার্মিনাল এলাকার মহাসড়কের ওপরে। এ অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ময়লা-আবর্জনা সরানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রথম শ্রেণীর মর্যাদাসম্পন্ন রাজবাড়ী পৌরসভা। এ দুর্গন্ধের কারণে ডায়রিয়া ও পেটের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে কয়েকটি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাজারো যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। রাজবাড়ী শহরে কাউকে ঢুকতে হলে এ সড়ক দিয়েই ঢুকতে হয়। বলতে গেলে এটা রাজবাড়ী শহরে ঢোকার প্রবেশপথ। অথচ রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রবেশমুখে এমন আবর্জনার ভাগাড় অন্য জেলার বাসিন্দাদের নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। আবর্জনার পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, আবাসিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকলেও এটা নিয়ে পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন সকালে পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা ১৫-২০টি ভ্যান ও একটি ট্রাকে করে ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, বাজার, হাসপাতাল, ক্লিনিকের ময়লা-আবর্জনা এনে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের ওপর ফেলছে।আবর্জনার স্তূপের ঠিক ৫০-৬০ গজ দূরেই রয়েছে এলজিইডি অফিস, জেলা পরিষদের কার্যালয়, কয়েক শত দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান,মসজিদসহ বসতবাড়ি। তাদেরও সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে হাজার হাজার মানুষ। জনবসতি ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপরেই ময়লা-আবর্জনা ফেলে স্তূপ করে রাখছে পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা।শুধু সড়কে নয় পৌরসভার আবাসিক এলাকা,বিনোদপুর ৩নং ওয়ার্ড, ১ নম্বর বেরাডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ককের পাশেই ময়লার স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯১৩ সালে রাজবাড়ী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভার ১১ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫৫ হাজার ৭৮২ জন মানুষের বসবাস। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের বর্জ্য এক সময় যত্রতত্র ফেলা হতো। পরে ৬ নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর এলাকায় বর্জ্য ফেলানোর জন্য পাঁচ একর জমি ক্রয় করা হয়। তারপর থেকে ওই এলাকাতেই পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

যদিও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখার জন্য পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে পৌরসভার। তবে ডাম্পিং করার মতো জায়গা না থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ী পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৌরসভায় বর্তমানে ৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ১৫ জন সুপারভাইজার রয়েছেন। ময়লা পরিষ্কারের জন্য রয়েছে দুটি ট্রাক ও একাধিক ভ্যান।

স্থানীয় ও সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, পৌরসভার এমন কর্মকাণ্ডে ভোগান্তির পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন মোঃ মতিন মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দিনের পর দিন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর ময়লা ফেলছেন পৌরসভার কর্মীরা। মাস্ক পরা তার পরও দুর্গন্ধে নাক মুখ চেপে ধরে চলতে হয়।

ময়লার স্তুপ এর ঠিক উল্টা পাসে থাকা বিল্লাল এন্ড সন্স এর পরিচালক রাসেল মুন্সি জানান, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এখানের ঠিক উল্টা পাশেই পৌর সভার ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়।এমন দুর্গন্ধ ছড়ায় নিজে রাই দোকানে বসে থাকতে পারি না।কাস্টমার তা আসতেই চায় না।এমন দুর্গন্ধে ব্যবসা পরিচালনা করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ফারুক হোসেন বলেন, কেবল আসা-যাওয়ায় চরম ভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। আশপাশের বাড়ির ছোট্র শিশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রাতের বেলায় দুর্গন্ধে ঘুমানোও যায় না। খাওয়া-দাওয়া করতেও কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি দেখারও কেউ নেই।

শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন বলেন, ময়লা-আবর্জনার কারণে শ্রীপুরে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। কোনো দোকানেই শ্রমিকরা বসে এক কাপ চাও খেতে চায়না। এ দুর্গন্ধ নিয়ে জীবনযাপন করা এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কমে গেছে প্রতিটি দোকানের বেচাকেনা।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) রাজবাড়ী শাখার সভাপতি প্রফেসর শংকর চন্দ্র সিনহা বলেন, শহরের প্রবেশমুখে এমন ময়লার ভাগাড় রাজবাড়ীর সৌন্দর্য সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী অনান্য জেলার বাসিন্দাদের নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। তাছাড়া শহরের মধ্যে এমন ময়লার স্তূপ থাকায় আশেপাশের মানুষের চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই রকম আবর্জনার স্তূপ শহরের বাইরে থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের রাজবাড়ীর ক্ষেত্রে সেটা বিপরীত। শহরের প্রবেশপথে এই বর্জ্যে শহরের সৌন্দর্যটাকেই নষ্ট করে দিয়েছে। এ ছাড়া বর্জ্যের দুর্গন্ধে পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটছে। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এভাবে সড়কঘেঁষে বর্জ্য ফেলার নজির নেই। হাজার কোটি টাকা খরচ করে জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকার সড়কের উন্নয়ন করলেও বর্জ্যের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম এ হান্নান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এর সংস্পর্শে বা এর ধোঁয়ার প্রভাবে জনসাধারণের চর্ম রোগ, শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।এছারাও করোনার মধ্যে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় যেখানে-সেখানে এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখলে এটি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটন এ বিষয়ে বলেন, পৌরসভার ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ডেঙ্গুবিষয়ক একটি সভা করা হয়েছে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রতিরোধটাই মূল কথা। মশা যাতে না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি রাজবাড়ী জেলার জন্য ৬০০ ডেঙ্গু শনাক্ত কিট পাওয়া গেছে, যা চারটি উপজেলায় ১০০ করে ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ২০০টি বণ্টন করা হয়েছে। এ ধরনের রোগী শনাক্ত হলে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। তার পরও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মো. আলমগীর শেখ তিতু বলেন, এ বিষয়ে পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, এটি রাজবাড়ী পৌর এলাকার বর্জ্য অপসারণ করার নির্দিষ্ট স্থান। পৌরসভার নিজস্ব ক্রয় করা জমি। এটাও ঠিক, এখানে বর্জ্যা ফেললে পথচারীসহ আশপাশের মানুষের অসুবিধা হয়। ময়লার ফেলার পর তা ভেকু মেশিন দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়। বর্ষা মৌসুমে ময়লার গাড়ি বেশি দূর যেতে পারে না। তবে পৌরসভার ময়লা ডাম্পিং করার জন্য ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রীপুরের মাঠে কাজ চলছে। যে প্রকল্পের সময় আছে আরো এক বছর। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের মধ্যেই একটি ময়লামুক্ত পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গড়া সম্ভব হবে।মেয়র আরো বলেন, মশক নিধনে পৌরসভা ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এমনকি সিটি করপোরেশনে যে ওষুধ ছিটানো হয়, তেমন মানসম্মত ওষুধ কেনা হয়েছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: