আযান দিতে যাওয়ার সময় বৃদ্ধ মুয়াজ্জিনকে মারধর
মশিউর রহমান কাউসার, (গৌরীপুর) :
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মসজিদে আযান দিতে যাওয়ার সময় পথে মোঃ রমযান আলী মুন্সী (৭০) নামে মসজিদের এক মুয়াজ্জিন কে পিঠিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠেছে প্রতিপক্ষ আবুল হাসিমের বিরুদ্ধে। হামলাকারী ব্যক্তি এলাকার প্রভাবশালী ও বেপরোয় প্রকৃতির লোক হওয়ায় এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা অথবা বিচার করতে সাহস পাচ্ছেনা স্থানীয় লোকজন। এদিকে হামলার ঘটনায় সামাজিকভাবে কোন বিচার না পেয়ে বিছানায় শুয়ে মহান আল্লাহর কাছে বিচারের জন্য প্রার্থনা করছেন বাড়িতে চিকিৎসাধীন এ মুয়াজ্জিন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিন ভোরে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বিসকা ইউনিয়নের বাথুয়াদি গ্রামে এ ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনাটি ঘটে।
উল্লেখিত বাথুয়াদি গ্রামে বাগে জান্নাত জামে মসজিদের আহত মুয়াজ্জিন মোঃ রমযান আলী জানান, বাথুয়াদি গ্রামের আবুল হাসিমের বাবা আমজাদ আলী ফকির জীবিত থাকাকালে প্রায় ১১ বছর আগে এ মসজিদের নামে ৫ শতক জমি দলিল করে লিখে দিয়ে যান। এ দলিলে সাক্ষী ছিলেন আমজাদ ফকিরের ভাই আব্দুল জব্বার ও তিনি (মুয়াজ্জিন)। আমজাদ আলী ফকিরের মৃত্যুর পর মসজিদের নামে লিখে দেয়া জমির এ দলিলকে জাল বলে মন্তব্য করে সেই জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে আবুল হাসিম। এ নিয়ে গত দু’বছর ধরে মসজিদ কমিটির সঙ্গে বিরোধ চলছে আবুল হাসিমের।
তিনি বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে সম্প্রতি আবুল হাসিম মসজিদে আযান দিতে ও নামাজ পড়াতে বিভিন্ন ভাবে তাকে নিষেধ করে আসছিলেন। এ নিষেধ অমান্য করায় ঘটনার দিন ভোরে মসজিদে ফজরের আযান দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় অতর্কিতে লাঠি দিয়ে লোকজনের সামনে বেধড়ক মারধর করেন আবুল হাসিম।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হাসিমের বড় ভাই জলকদর মাস্টার মুয়াজ্জিনকে মারধরের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তার ভাই আবুল হাসিম বেপরোয়া প্রকৃতির একজন অসামাজিক লোক। মসজিদের নামে বাবার লিখে দেয়া জমি ফিরিতে দিতে মসজিদ পরিচালনা কমিটির লোকজন ও মুয়াজ্জিনকে দু’বছর ধরে নানা হুমকী দিয়ে আসছিল সে। এ নিয়ে গত বছর মসজিদের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল আবুল হাসিম। এতে দীর্ঘদিন মসজিদে জামাতে নামায আদায় ও শিশুদের মক্তবের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল বলে জানান তিনি।
মসজিদের স্থানীয় মুসল্লী আল আমিন মুয়াজ্জিন কে মারধরের ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে জানান, মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধ কে কেন্দ্র করে এলাকায় একাধিকবার দেন দরবারের আয়োজন করা হলেও দরবারে উপস্থিত হননি আবুল হাসিম।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন হিমেল জানান, মসজিদের মুয়াজ্জিনকে
মারধরের ঘটনায় আবুল হাসিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বর্তমানে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। আবুল হাসিমের তান্ডব আতঙ্কে বর্তমানে মসজিদে কেউ নামাজ পড়াতে আসতে চাচ্ছেনা। মুসল্লীগন জামাত ছাড়াই বর্তমানে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুয়াজ্জিনকে মারধরের কথা অস্বীকার করে আবুল হাসিম জানান, মসজিদের নামে ৫ শতক জমি লিখে দেয়ার বিষয়টি তার বাবা জীবিত থাকাকালে তাকে জানায়নি। এ নিয়ে মামলা মোকাদ্দমা চলছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে ফাঁসাতে বড় ভাই জলকদর মাস্টার মুয়াজ্জিনের ওপর হামলার নাটক সাজিয়ে এলাকায় গুজব ছড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।