South east bank ad

অব্যহত নদী ভাঙ্গনে হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ

 প্রকাশ: ০৮ অগাস্ট ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

খন্দকার রবিউল ইসলাম, (রাজবাড়ী) :

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই রাজবাড়ীর পদ্মায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতেকরে গত কয়েকদিনে বিলীন হয়ে গেছে নদী তীর রক্ষায় ব্যবহিত কংক্রিটের তৈরি হাজার হাজার সিসি ব্লক সহ প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে শহর রক্ষা বাধ হুমকির সম্মুখে পরবে বলে মনে করছেনএলাকাবাসী ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙ্গন ঠেকাতে কাজ করছে যাচ্ছেন তারা।

শনিবার(৭ আগস্ট) রাজবাড়ী শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে মিজানপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দর এলাকায় ভোর ৬টা থেকে ভাঙন শুরু হয়। পরে আবার দ্বিতীয় বার বিকেল ৩টার দিকে মৌলবীর ঘাট এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়।এতে প্রায় ৯০মিটার কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লক ধসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোদারবাজার থেকে ২০০ গজ সামনে চর ধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে নদী ভাঙনে ৪০ মিটার এলাকার কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলমান থাকা কালীন এই ভাঙন শুরু হয়।

এতে ঐ এলাকার চর ধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ একাধিক বসতভিটা হুমকির মধ্যে রয়েছে।এছাড়া ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ।এসময় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে সিসি ব্লক ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করতে দেখা যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক দশক ধরে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙনে সদর উপজেলার মিজানপুর ও বরাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বিলীন হয়ে আসছে। আর এ নদী ভাঙনে স্কুল, মসজিদ মাদ্রাসা, মসজিদ, ব্রিজ, কালভার্ট, বসত বাড়ি, আমবাগান ও ফসলি জমি হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের সবকিছু হারিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে বেচে আছে নতুন কোন ঠিকানায়।

এর আগে গত ১৬ জুলাই (শুক্রবার) গোদার বাজার চরসিলিমপুর এলাকায় ২০ মিটার ও গত ২৭ জুলাই (মঙ্গলবার) গোদারবাজার এনজিএল ইট ভাটার পাশে প্রায় ২০০ মিটার নদী ভাঙন হয়। নদীর তীর এলাকার প্রকল্পের স্থানের কাজ শেষের দুই মাস না যেতেই তিনটি পয়েন্টে ব্লক ধসে যায়। পরে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ক্ষতিগ্রস্থ মোঃ চাদ আলী জানান, ইতোপূর্বে ভাঙনে ৩ দফা বাড়ি হারিয়েছি। শুস্ক মৌসুমে পরের জমিতে কোনরকমে টিনের চালা দিয়ে বাড়ি করে বসবাস করছি। কিন্তু আবারও নদী ভাঙনে শেষ ঠাঁইটুকু পদ্মা কেড়ে নিবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভাঙন রোধে ২০১৮ সালের জুন মাসে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের ডান তীর প্রতিরক্ষার কাজ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাটে তিন ও মিজানপুরে দেড় কিলোমিটারসহ সাড়ে চার কিলোমিটার এবং ২০১৯ এর জুলাইয়ে শুরু হওয়া (প্রথম সংশোধিত) শহর রক্ষা বাঁধের গোদার বাজার অংশের আড়াই কিলোমিটারসহ মোট সাত কিলোমিটার এলাকায় ৪৫২ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে দ্বিতীয় পর্যায়ের সাড়ে চার কিলোমিটারে ৩৭৬ কোটি ও প্রথম সংশোধিত ১৫২৭ মিটারে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের জন্য ৮.৩ কিলোমিটার অংশে ৪৯ লক্ষ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।

নদীর তীরের স্থানীয় মোঃ জিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরেই নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।গত শনিবার ভোর ৬টা থেকে হঠাৎ ভাঙনের শব্দ শুনে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখি শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক দেবে মাটির পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই নদীর তীরে ৪০মিটার এলাকা ভেঙে স্কুলের দিকে ঢুকে পড়েছে। এখানে একটি মসজিদ ও শতাধিক বাড়ি রয়েছে যা এখন হুমকির মুখে।
ধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের থেকে মাত্র ১০মিটার দূরে নদীর অবস্থান থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছে।

ধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দোলেনা সুলতানা জানান, বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে অতিগুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ এখনই সরাচ্ছিনা।

পানি উন্নয়নবোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, ভোর ৬ টার দিকে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করতে জরুরি ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিওব্যাগ এবং টিউব ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। এখনো কাজ চলমান রয়েছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: