রাজশাহীতে ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশে করোনার গণটিকা, ছিল ভোগান্তিও
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
রাজশাহী মহানগরীতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথম দিনের (শনিবার) গণটিকা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তবে কিছু কেন্দ্রে নির্ধারিত টিকার অতিরিক্ত মানুষ টিকা নিতে আসায় সিটি করপোরেশন থেকে অতিরিক্ত টিকা সরবরাহ করে টিকা দেয়া হয়েছে। আবার কিছু কেন্দ্রে টিকার লক্ষ্যমাত্রা শেষ হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া কিছু টিকাকেন্দ্রে টিকার রেজিস্ট্রেশন না করেই শুধু আইডি কার্ড সঙ্গে এনে টিকা নিতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেককে ফিরে যেতে দেখা গেছে। প্রথম দিন টিকা নিতে নগরবাসীর অধিক আগ্রহ থাকায় উপচেপড়া ভিড়ের কারণে তাদেরকে নানামুখি ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়েছে।
সরেজমিনে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মহানগরীর ১০ টি ওয়ার্ডের অন্তত ১৫টি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে- কেন্দ্রগুলোতে ছিল টিকা নিতে আসা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ড কার্যালয় কেন্দ্রে দুপুর পৌনে ১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়- সকাল ৯টা থেকে ওই সময়ের মধ্যে দুইটি বুথে ৬০২ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে।
ওই ওয়ার্ডের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সুপারভাইজার মো. আলম শেখ বলেন, ‘প্রথম দিনের টিকার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের পরও টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখে আরও ৪০০ জনকে টিকা প্রদানের জন্য সিটি কপোরেশন থেকে টিকা নিয়ে আসা হয়েছে।’ একইভাবে ২৭ নং ওয়ার্ডের বালিয়া পুকুর বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রের দুইটি বুথে দুপুর সাড়ে ১২টায় নির্ধারিত টিকা শেষ হয়ে যায়। পরে টিকা সরবরাহ করে আবারও ওই কেন্দ্রে টিকা প্রদান শুরু হয়। এমনিভাবে অধিকাংশ কেন্দ্রেই নির্ধারিত টিকার অতিরিক্ত মানুষ টিকা নিতে আসায় নতুন করে টিকা সরবরাহ করে পুনরায় টিকাদান শুরু করা হয়।
তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্রে। সেখানে টিকার লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হয়নি। সেখানে টিকাদান কার্যক্রমে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘এই কেন্দ্রে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০০। কিন্তু ২৭০ জনকে টিকা প্রদান করতে পেরেছি। লোকজন না আসায় ২টার মধ্যেই ক্যাম্পেইন বন্ধ করেছি।’
তবে ওই ওয়ার্ডের শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে টিকা নিতে যাওয়া শাকিল হোসেন বলেন, ‘আমি পৌনে দুপুর ২টার দিকে সেখানে টিকা নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সিরিঞ্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি টিকা না নিয়েই ফিরে এসেছি।’
এদিকে টিকা রেজিস্ট্রেশনের সার্ভারের (সুরক্ষা অ্যাপ্স) সমস্যার কারণেও রেজিস্ট্রেশন না করতে পেরে ২১ নং ওয়ার্ডের সূর্যকণা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দীর্ঘ লাইনে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকা নিতে পারেননি নগরীর শিরোইল এলাকার রিকশাচালক মো. সাইদুল। ‘তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রিকশা চালানো বাদ দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় এসেছি টিকা নিতে। কিন্তু আমাকে রেজিস্ট্রেশন করে না দেয়ায় টিকা নিতে না পেরে ফিরে (দুপুর পৌনে ২টা) যাচ্ছি।’
ওই কেন্দ্রে টিকার রেজিস্ট্রেশন করে দেয়ার কাজে নিয়োজিত ২১ নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবী নাজমা আক্তার বলেন, ‘সারাদেশে গণটিকা চালু হওয়ায় সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা গেলেও অধিকাংশ সময়ই যাচ্ছে না।’ সরেজমিনে দেখা গেছে- রেজিস্ট্রেশন না করেই অনেকে শুধু এনআইডি কার্ড ও এর ফটোকপি সঙ্গে এনে টিকা নিতে এসেও ফিরে যেতে দেখা গেছে।
নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড কার্যালয় কেন্দ্রে ৭৪ বছর বয়সী দড়িখরবনা এলাকার মোসা. রুপভানু বেওয়া নামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘আমি জানতাম না রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তাই আইডি কার্ড নিয়ে এসেও টিকা না নিয়ে ফিরে যেতে হলো।’
রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘৬ দিনের ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতিদিন ২৫ হাজার জনকে মর্ডানার প্রথম ডোজ টিকা প্রদান করা হবে। তবে প্রথম দিন টিকা নিতে আসা লোকজনের ভিড় বেশি হওয়ায় এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে প্রতিদিন ২৫ হাজার জনকে এই টিকা দেয়া হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সুশৃঙ্খলভাবে টিকাদান কর্মসূচি শেষ করার।’
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে নগরীর ৮৪টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে দ্ইুজন টিকাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত আছে। আমরা সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি। করোনা থেকে মুক্তি পেতে টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই; সেটি বুঝতে পেরেই টিকাগ্রহণে নাগরিকদের আগ্রহ অনেক বেশি।’