ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী বৃষ্টি পেলো মুজিব বর্ষের ঘর
জাকির হোসেন, (সালথা) :
ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় আলফাডাঙ্গা গ্রামের প্রতিবন্ধী বৃষ্টি পেলো মুজিব বর্ষের ঘর। জানা যায়, প্রতিবন্ধী বৃষ্টির মাতার নাম বেদানা বেগম। প্রায় দেড়যুগ আগে বেদানা বেগমের বিয়ে হয় স্থানীয় চুন্নু শেখের সাথে। বিয়ের পরে তাদের কোল জুড়ে আসে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রাখা হয় বৃষ্টি। আস্তে আস্তে যখন বৃষ্টি বড় হতে থাকে তখন দেখা যায় সে প্রতিবন্ধী। এরই মাঝে বেদানার স্বামী চুন্নু শেখের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
একেবারেই অসহায় হয়ে পড়ে বেদানা ও তার প্রতিবন্ধী সন্তান বৃষ্টি। কষ্টে দিন কাটতে থাকে তাদের। মা বেদানা আর সন্তান বৃষ্টির কোন থাকার ঘর নেই। যেখানে তাদের আহারের ব্যবস্থা করাই ছিল দুঃসাধ্য সেখানে মাথা গোজার ঠাই একটি ঘর ছিল দুঃসাধ্য। থাকতেন পরের জায়গায়।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহহীনদের ঘর প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়। বৃষ্টির বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। অন্যান্যদের সাথে তাদের জন্যও বরাদ্দ হয় একটি ঘর। ঘর পেয়ে নিদারুন খুঁশি হয় বৃষ্টি। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার গত ঈদ উল আযহার আগে জেলার পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পৌছে দেন। আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বৃষ্টির জন্যও পৌছে যায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। স্পষ্ট করে কথা বলতে না পারলেও মানুষের কথা বুঝতে পারে বৃষ্টি। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারকে স্বচক্ষে না দেখলেও তার সম্পর্কে একটি সুধারণা বৃষ্টির মনে গেথে যায়।
৬ আগস্ট, ২০২১ শুক্রবার ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চর কাতলাসুর গ্রামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বপ্ননগরে বাসিমন্দাদের খোজ খবর নিতে ছুটে যান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। আলফাডাঙ্গা থেকে তার সাথে যোগ দেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন।
বাসিন্দাদের খোঁজ খেবর নেওয়ার এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও অন্যান্যরা বৃষ্টির আঙ্গিনায় পৌঁছান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আগতদের পরিচয় প্রদানের সময় ‘ডিসি’ শব্দটি শুনে খুঁশিতে হাউমাউ করে উঠেন। মাঝ বারান্দা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বারান্দার কিনারে পৌছে জেলা প্রশাসকের কাছে এগিয়ে যায়। এ সময় জেলা প্রশাসক অতুল সরকারও এগিয়ে আসে। খুশিতে হাউমাউ করে বৃষ্টি বারবার তার মাথার উপরে হাত দিয়ে বোঝাতে থাকে জেলা প্রশাসক তার মাথায় ছায়া হয়ে আছে। জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এসময় তার মাথায় হাত দিয়ে তার খুশিতে ভাগীদার হয়ে উঠেন। বৃষ্টি বারবার হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তার ঘরটি দেখাতে থাকে। প্রতিবন্ধ্বী বৃষ্টির মাথায় মানবতার ছাতা হয়ে থাকা ঘটনাটি সকলের মনকে নাড়া দিয়ে যায়।
অতঃপর সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক অন্যান্যরা স্বপ্ননগরে বাসিন্দাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে জীবনযাত্রার খোঁজখবর নেন। তাদের সাথে কথা বলেন। ঘুরে ঘুরে দেখেন তাদের বসত আঙ্গিনায় রোপিত ফলমূল-সব্জি গাছের সমাহার। খোঁজ নেন বাসিন্দাদের সন্তানদের পড়ালেখার। শিল্প সাংষ্কৃতিক বিষয়ে তাদের আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগের কথা জানান। দেশের উন্নয়নের স্রোতে তাদের শামিল করতে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক। পরামর্শ দেন আগামীর উন্নয়নে। অতঃপর স্বপ্ননগর বাসিন্দাদের আয়োজনে একটি মতবিনিময় সভায় যোগদেন আগতরা।
ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রত্যেকটি পরিবারকে তাঁদের বাসস্থানের নিশ্চিত করা। দেশে কেউ গৃহহীন থাকবেনা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের উপকারভোগীদের দ্বায়িত্ব হচ্ছে তাঁদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। তিনি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদেরকে বাল্যবিয়ে পরিহারসহ সামাজিক উন্নয়নে সচেতন থাকার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আপনাদের বাসস্থান গড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই আশ্রয়ের পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হবে আপনাদেরই। নইলে এর জন্য আপনাদেরই কষ্ট পোহাতে হবে। এসময় তিনি জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে সাথে নিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং আশ্রয়ন প্রকল্পে বৃক্ষরোপণ করেন।
দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পে যেসব বাসিন্দা তাঁদের সন্তানদের পড়াশুনার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন, যারা পরিবেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবেন তাঁদেরকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। এছাড়া তিনি সেখানকার নারীদের সমিতি গড়ে বিভিন্নভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার পরামর্শ দেন।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদ, থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওহিদুজ্জামান, পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ দেলোয়ার হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান আহাদুল হাসান আহাদ বক্তব্য দেন। ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল কবির ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলফাডাঙ্গার ‘স্বপ্ননগর’ নামের এই আশ্রয়ন প্রকল্পে বাসিন্দাদের জন্য স্কুল, খেলার মাঠ, ইকো পার্ক, মসজিদ, ঈদগাহ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশান, প্রস্তাবিত কমিউনিটি ক্লিনিক, হাট, ৩৮টি নলকুপ স্থাপন করা হচ্ছে।