গৃহবধূকে নির্যাতন করে স্বামীসহ শ্বশুর-শ্বাশুরি পলাতক
আব্দুর রহমান, (নেত্রকোণা) :
যৌতুকের টাকা এনে না দেয়ায় নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামের ইতি আক্তার (১৯) নামে ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা এক গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে স্বামী মনির হোসেন (২৭) শ্বশুর নজরুল ইসলাম (৫২) শ্বাশুরি স্বপ্না আক্তার (৪৫) ও দেবর শুভ মিয়া (২৫) কে আসামী করে গত ২৯ জুলাই নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও আসামীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। তবে কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ জানান, মামলার পর থেকেই আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাই গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে নেত্রকোণার পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুন্সী কেন্দুয়া থানায় মামলার বাদী ও সাক্ষিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলেও জানান ওসি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ মার্চ ইসলামী শরিয়া মোতাবেক রেজিস্ট্রি কাবিল মূলে কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মনির হোসেনের সাথে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উত্তরবনগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে ইতি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ ছেলেপক্ষকে পৌণে দুই লাখ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেলসহ আরও এক লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র প্রদান করে মেয়েপক্ষ। কিন্তু যৌতুকলোভী স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুরিসহ পরিবারের লোকজন বিয়ের পর আবারও বাবার বাড়ি থেকে আরও তিন লাখ টাকা এনে দিতে ইতি আক্তারকে চাপ দিতে থাকে। এতে কাজ না হলে একপর্যায়ে স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুরি এবং দেবর মিলে ইতি আক্তারের উপর পালাক্রমে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এরই জের ধরে গত ২৪ জুলাই দুপুরে স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন মিলে ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা ইতি আক্তারকে মারপিট করে আহত করে। পরে সংবাদ পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে গিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় ইতি আক্তারকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নির্যাতিত গৃহবধূ ইতি আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওরা আমাকে প্রায় সময়ই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে আসছিল। ঘটনার সময় ওরা আমার পেটে ও বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে এলোপাথারী কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। তখন তাদের মারপিটে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তারপর আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করি। এছাড়া মারপিটের পর থেকে তার গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ রয়েছে এবং সন্তান নষ্ট হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে পলাতক থাকায় বার বার চেষ্টা করেও বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তদের কারো সাথেই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কয়েক জন প্রতিবেশির সাথে কথা হলে তাদের কাছ থেকে জানা যায়, মামলা হওয়ার পর থেকে তারা সবাই পালিয়ে গেছে।