রাজাপুরে আউশের আবাদে আগ্রহ নেই কৃষকদের
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি) :
ঝালকাঠির রাজাপুরে নানা সমস্যা ও সংকটের কারণে দিন দিন আউশ ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। কয়েক যুগ ধরে শুধু আমন ধানের চাষ হওয়ায় আউশ মৌসুমে কয়েক হাজার জমি খিল (অনাবাদী) থেকে যাচ্ছে। এতে একদিকে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, অপরদিকে শুধু আমন ধানে উৎপাদিত চালে এলাকার চাহিদা পুরন হচ্ছে না। ফলে অন্য জেলার চালের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েই চলেছে। উপজেলা সদরের থানা রোডের চাল ব্যবসায়ী মোঃ আবদুস সালাম জানান, রংপুর, রাজশাহী ও নওগাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চাল এনে এই উপজেলার চালের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এ উপজেলার কৃষকরা তাদের জমিতে শতভাগ আমন ধান চাষের মতো আউশ ধান শতভাগ জমিতে চাষ করলে অন্য উপজেলার চালের উপর নির্ভরশীল হতে হতো না। বর্তমানে মৌসুমে জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার সর্বত্রই আউশ ধান কাটার মৌসুম থাকলেও কোথাও তেমন কোন ধান কাটার বা মারাই করার দৃশ্য চোখে পড়ছে না। এক সময় এলাকার কৃষকের উৎপাদিত চাল দিয়ে এলাকাবাসির চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলাও চাহিদা পুরণে সহায়ক ভুমিকা রাখতো।
জানা গেছে , প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে এ উপজেলায় প্রতি বছর তিন মৌসুমে বোরো, আউশ ও আমন ধান চাষ করা হতো। কয়েক বছর আগে থেকে বোরো ধানের চাষ করা হয় নাম মাত্র। আউশ ধানের চাষ করা হয় সামান্য পরিমানে।
উপজেলার কৃষক রবিন সিকদার, বাবুল ও আবুল কালামসহ একাধিক কৃষক জানান, কোন শ্রমিক ছাড়া কৃষকের একার পক্ষে জমি চাষাবাদ করা সম্ভব না। বর্তমানে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এলাকার শ্রমিকরা অটো, ভ্যান, রিক্সা, টেম্পো ও ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলসজ বিভিন্ন মাধ্যমে উপার্জন করছেন। কাদা-পানিতে কৃষি কাজ করার জন্য কোন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আর পেলেতা তাদের মজুরি আকাশ চু¤ি¦। ২০/৩০ বছর আগের মুল কৃষকরা বৃদ্ধ ও মারা যাওয়ায় তাদের পরবর্তি প্রজন্ম প্রবাসে বা বিভিন্ন শহরে চাকরি করছেন। ফলে এলাকায় বেশীর ভাগ পরিবার হালের বলদ পালন ছেড়ে দিয়েছে। চাষের জন্য কৃষি অফিসের পাওয়ার টিলার অপ্রতুল থাকায় বর্গা চাষিরা টাকা দিয়ে পাওয়ার টিলার দ্বারা জমি চাষ করতে ইচ্ছুক না এবং নির্দিষ্ট সময় পাওয়ার টিলার পাচ্ছেন না তারা। এ উপজেলার সকল নালা বা খাল পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ঠিক মতো সময় জমিতে পানি উঠে না এবং পানি উঠলে আর নামে না। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আবহাওয়া বৈরী হওয়ায় অনাকাঙ্খিত প্লাবন বা অতি খড়ার সৃষ্টি হচ্ছে। অনিয়মিত অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলার পূর্ব সিমানায় বিষখালী ও জাঙ্গালিয়া নদী তীরে বিশাল এলাকা জুড়ে ফসল রক্ষা বাধ নেই। মৌসুমি বাধের অভাব রয়েছে। এসকল সমস্যার কারনে আউশধান চাষ করা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন এলাকার কৃষকরা।
উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের কৃষক রবিন সিকদার জানান, আউশ ধান চাষ করতে চাষ, রোপন, কর্তন, মাড়াই-জাড়াই, সার, কিটনাশক, বীজ, আন্ত পরিচর্যা খরচ ও জমির বাৎসরিক দামসহ প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ ফলন উৎপাদন হলে প্রতি হেক্টরে চার মেট্রিকটন ফলন পাওয়া যেতে পারে। যার মূল্য হতে পারে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তাই নানা সমস্যার কারনে এলাকার কৃষকরা বছরে একবার শতভাগ আমন ধান চাষ করেন। তাতে এলাকা বাসির চালের চাহিদা না মেটায় অন্যান্য জেলার চালের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।
উপজেলার জীবনদাসকাঠি গ্রামের কৃষক মোঃ ইউসুফ হাওলাদার জানান, তার প্রায় দুই একর জমি, তাতে কয়েক বছরধরে বোরো বা আউশ ধানের চাষ করেননা, শুধু আমন ধান চাষ করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজউল্লাহ বাহাদুর জানান, উপজেলায় কৃষকের সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৫০ জন। ধান চাষ যোগ্য জমির পরিমান ১১ হাজার ৯৫০ হেক্টর। এবছর বোরো ধান চাষ করা হয়েছে ১৭৮ হেক্টর জমিতে, আউশ ধান চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে এবং আমন ধান চাষের জন্য অনাবাদি রয়েছে ৬ হাজার ৯৯২ হেক্টর। ধান ও চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও প্রেরনায় এলাকার কৃষকরা দিন দিন ধান চাষের প্রতি আগ্রহি হচ্ছেন। কিন্তু উপজেলার অধিকাংশ জমি আউশ ধানের চাষের আওতায় আনতে হলে উপজেলার সকল নদী-নালা ও খাল খনন করা ও কমপক্ষে ২শ’ পাওয়ার টিলারের ব্যবস্থা করা, কৃষকদেরকে প্রণোদনা ও সুধ মুক্ত কৃষি ঋণ দেয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা উচিত। বিষয়টি উধ্বর্তনদের অবহিত করা হবে।