মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান
মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহবান জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, দায়িত্বশীল সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ ও সচেতন হতে হবে। কোনভাবেই যেন অপরাধীরা পার পেয়ে না যায়।
৩০ জুলাই আন্তর্জাতিক মানব পাচার বিরোধী দিবসকে সামনে রেখে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাছিমা বেগম এই কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বৃহস্পতিবার অনলাইনে ‘মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ ও করনীয়’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নাছিমা বেগম বলেন, মানব পাচার মানবাধিকরের চরম লঙ্ঘন। এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে সজাগ। দায়িত্বরত সবাইকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তাদের প্রতিহত করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে কিশোরী পাচারের ঘটনা উল্লেখ করে নাছিমা বেগম বলেন, কী করে তারা ভারতীয় নানা ধরনের পরিচয় কার্ড পেয়ে যাচ্ছে? ভ্রমণ ভিসায় কী করে এতো লোক চলে যাচ্ছে সেটি দেখতে হবে। এই যে এতো লোক টুরিস্ট ভিসায় বিদেশে যাচ্ছে তারা কী নির্ধারিত সময়ে ফিরছে? এটি তো দেখতে হবে। আর এতো এতো পাচারকারী কিন্তু মানবপাচার আইনে নয় বছরে ৩৬ টা মামলায় মাত্র ৭১ জনের সাজা হলো কেন? অপরাধীদের বিচার করতে হবে। তাদের সাজার আওতায় আনতেই হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, জেনে বুঝে দক্ষ হয়ে বিদেশে যেতে হবে। প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষজন অনেকসময়েই সচেতন নন। একইভাবে যারা দায়িত্ব পালন করেন সেই সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সবার মানব পাচার ও অভিবাসন আইনের বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার। ব্র্যাক, বিএমইটি, সরকারি বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজ করলে আমরা অবস্থার পরির্বতন করতে পারবো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জি এস এম জাফরউল্লাহ পাচাররোধে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারি বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন আরও তৎপর হয় সে ব্যাপারে আমরা নজর রাখবো।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানবপাচার বিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, দেশের ভেতরকার পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করা সহজ, কারণ সব তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে পাচারের ঘটনায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা যথেষ্ট তথ্য দিতে চান না। আবার অনেক মামলার বাদী বা ভুক্তভোগীকেই পাওয়া যায় না। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যারা মানব পাচারের শিকার তারা কোন অভিযোগ করে না। তবে পুলিশ দেশে-বিদেশে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক খুঁজছে। পাচারকারীরা পার পাবে না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের উর্দ্ধতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ। তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে মানবপাচারের ঝুঁকি বেড়েছে। আমরা চাই লোকজন বিদেশে যাবে। কিন্তু বৈধভাবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগেই সেটি সম্ভব।
ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক জেনেফা জব্বার, বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও পাচার রোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরামর্শক এ কে এম মাসুদ আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইশরাত শামীম, আইন ও সালিশে কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা, ইউএনওডিসির জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী মাহাদী হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।