নওগাঁয় ধ্বংসের দিকে ঐতিহাসিক ভাঙা মসজিদ
আব্দুল্লাহ হেল বাকী (নওগাঁ):
নওগাঁর নিয়ামতপুরের ধর্মপুর গ্রামে অবস্থিত ভাঙা মসজিদ। মসজিদটির প্রত্যেকটি জায়গায় প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের ছাপ রয়েছে। এটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
মসজিদের চারটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে ৯ গম্বুজবিশিষ্ট এ নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। পুরো মসজিদ জুড়ে রয়েছে একটি দরজা রয়েছে। দ্বিতল ভবনের ভেতরে ও দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানি ও ফুল। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনি চার ফুট প্রস্থ যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা।
প্রাচীন স্থাপত্যকলার সুদৃশ্য মসজিদটি চিকন ইট, চুন সুরকির নির্মিত। মসজিদটি সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও মূল ভবন বা নামাজ ঘর তিনটি অংশে বিভক্ত। মসজিদটি ৪০০-৫০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু অযতœ-অবহেলায় ঐতিহ্য ও গর্বের এ মসজিদ আশির দশক থেকে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করেছে। দেয়ালে গাছপালা জেগে উঠেছে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। নামাজ পড়ার অনুপযুক্ত হওয়ার কারণে একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আরও একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, কোনো এক সময় প্রাচীন মসজিদটির আশপাশে মুসলিম ঘন জনবসতি ছিল। মসজিদের পাশে বিশাল পুকুর থাকার কারণে এখানে প্রাচীন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আবার কি কারণে তাঁরা মসজিটির আশপাশ এলাকার ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য আজও কেউ বলতে পারেননি।
ধরমপুর গ্রামের আনিছুর রহমান বলেন, গত ২০ বছর আগেও মসজিদটি অনেক সুন্দর ছিল। দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ মসজিদটি দেখতে আসতেন। এখানে শুধু দুই ঈদের নামাজ হতো। শেষ ঈদের জামাত ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত হয়। বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনেছি ১৯২০ সালে ভূমিকম্পে ৯টি গম্বুজসহ মসজিদটির কিছু অংশ ভেঙে যায়। তারপর থেকেই এটি ভাঙা মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটির একটি দরজার ওপর মূল্যবান কষ্টি পাথরে খোদাই করে আরবি ভাষায় কোরআনের সুরা লেখা ছিল। মূল্যবান পাথরটি ৩০/৩৫ বছর আগে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যান তা জানা যায়নি।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা তফিজ উদ্দিন বলেন, ২০২০ সালে সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের কিছু লোক এসে গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছিল। তারপর আজ পর্যন্ত তাঁদের আর কোনো খোঁজ-খবর নেই। এ মসজিদে আমি নামাজ পড়েছি। মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে তেমনি ঐতিহ্যও রক্ষা পাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া জয়া পেরেরা বলেন, মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরকে গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়েছি। বাংলাদেশে এত উচ্চ পিলারের মসজিদ কোথাও নেই। শিগগিরই এ মসজিদটি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় থাকবে।