মৌলভীবাজারে পাম্পকে জরিমানা করায় ফিলিং স্টেশনে ধর্মঘটের ডাক
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, (মৌলভীবাজার) :
মৌলভীবাজার জেলায় সকল সিএনজি ও পেট্রোল পাম্পে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কোন গাড়িতেই গ্যাস-তেল দেওয়া হচ্ছেনা। এতে রোগীবাহী পরিবহনের যাত্রী এবং জরুরি সেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চলাচলকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। ফলে জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার (২৫ জুলাই) রাতে শ্রীমঙ্গল-সিলেট রোডস্থ মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশনে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে গ্যাস দেওয়ার অভিযোগে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এই প্রতিবেদকে ফিলিং স্টেশন কর্মচারীরা বলছেন, সিএনজিতে অসুস্থ গর্ভবতী নারী থাকায় গ্যাস দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার জের ধরেই জেলার সকল ফুয়েল ফিলিং স্টেশন ধর্মঘট ডেকে তাদের সকল কার্যকম বন্ধ রেখেছে। ফলে জরুরি সেবাদানকারী অ্যাম্বুলেন্স সহ রোগীরাও তেল-গ্যাস নিতে পারছেন না।
এই প্রতিবেদককে গ্যাস স্টেশন কর্মচারী সিকান্দার আলী জানান, আমি যে সময় গ্যাস দিয়েছিলাম তখন মাত্র দুইটি সিএনজি ছিল। আমরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে গ্যাস দিয়েছিলাম। একটি সিএনজিতে ক্যান্সার রোগী ছিল। অন্যটিতে গর্ভবতী নারী ছিলেন, যার অবস্থা খ্বু খারাপ ছিল। তাই তাদের গ্যাস দিয়েছিলাম। হঠাৎ করে একজন ম্যাজিস্ট্রেট এসে বলেন এগুলো জরুরি রোগী নয়, কেনও গ্যাস দিচ্ছি। এই বলেই দুই হাজার টাকা জরিমানা করলেন। আমরাত ডাক্তার নই যে বুঝব কোনটা জরুরি আর কোনটা জরুরি নয়। আমরা প্রেসক্রিপশনের তারিখ দেখে গ্যাস দিচ্ছি। তিনি গাড়িতে রোগী আছে কিনা সেটা দেখতে রাজি না।
এই প্রতিবেদককে মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশন ম্যানেজার জিতেন্দ্র রায় জানান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সাবরিনা রহমান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়িতে গ্যাস-তেল দেওয়ার জন্য। জরুরি দেখে দেখে আমরা পুলিশ, সাংবাদিক, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি রোগীবাহী সিএনজিতে গ্যাস দিচ্ছি। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট এসে বলেন এটা জরুরি রোগী নয়। তাই আমাদের দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি এন্ড ফুয়েল ফিলিং স্টেশনের মালিক মনোয়ার আহমেদ রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বাকি ৬৩ জেলায় এরকম আইন নেই। শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলায় গ্যাস-পেট্রোল-ফুয়েল দিতে প্রশাসনের মানা। আমরা লিখিত নির্দেশনা চাইলেও সেটা দেয়া হয়নি। ধর্মঘটের বিষয়টি আমরা সিলেট বিভাগীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি। ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকেও জানাব।
শ্রীমঙ্গলের কালাপুর মেরিগোল্ড ফিলিং স্টেশনের মালিক সৈয়দ সাইফুল আলী বলেন, প্রশাসনের একজন এসে বলেন রোগীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহনে গ্যাস-পেট্রল দেওয়া যাবে। আরেকজন এসে জরিমানা করেন। অসুস্থ গর্ভবতী নারীকে বহনকারী সিএনজিতে গ্যাস দেওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করে দিয়েছেন। এছাড়াও গ্যাস না দিলে সিএনজি চালকরা উৎপাত করে, কেউ কেউ ভাঙচুর করে। তারচেয়ে ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেয়া ভালো। আমরা পুরো জেলা জুড়েই সকল ফুয়েল ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছি।
তবে এই প্রতিবেদককে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, তারা জরুরী সেবা গ্রহীতা ছাড়াও অনেক সিএনজি এবং অন্যান্য যানবাহনে গ্যাস ও তৈল সরবরাহ করায় তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। তখন এই প্রতিবেদককে এখন তারা জরুরী সেবা সহ কাউকেই গ্যাস দিচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক জানান-তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।