সালথায় পাট কাঁটা-ধোয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে পাট চাষীরা
জাকির হোসেন (সালথা):
পাট পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পাট কাঁটা-ধোয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে পাট চাষীরা। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় পাট কাঁটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও পাট শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। অন্য বছরের তুলনায় এবছর পাটের উৎপাদন ও দাম নিয়ে সঙ্কায় রয়েছে পাট চাষীরা। এমতাবস্থায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক।
পাট উৎপাদন মৌসুমের মাঝামাঝিতে আগাম অতিবৃষ্টির কারনে উপজেলা অনেক এলাকায় কৃষি জমির নিচু অংশে পানি জমে যায়, পাটের গোড়া পঁচে যাবে এই ভয়ে অনেকেই অপরিপক্ক পাট কেঁটে পঁচানোর জন্য জাগ দিয়েছে। আবার পরিপক্ক হওয়ার পর উঁচু জমির পাট কেঁটে নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের জমিতে পাট পঁচানোর জন্য জাগ দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানেও পর্যাপ্ত পানির সমস্যা রয়েছে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারনে পানি নিয়ে সঙ্কা কমেছে। আগাম অতিবৃষ্টি ও মৌসুমের শুরুতে শ্রমিক সংকটে গতবছরের চেয়ে চাষ বেশি হলেও উৎপাদন হয়েছে তুলনামূলক কম।
গত মৌসুমের শুরুতে পাটের দাম স্বাভাবিক থাকলেও শেষের দিকে পাটের দাম ভাল পাওয়ায় চাষীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। চলতি মৌসুমের শুরুতে পাটের দাম সন্তোষজনক থাকলেও বর্তমানে পাটের দাম নিম্নমুখি। দাম নিয়ে বর্তমানে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক চাষীরা। অনেকেই লকডাউনের কারনে দাম কমেছে বলে মতামত দেন।
উপজেলার বেশ কয়েকজন পাট চাষীর সাথে কথা হলে তারা জানান, আগাম অতি বৃষ্টির কারনে নিচু জমির পাট গাছ বড় হওয়ার আগেই পাট কেঁটে ফেলা হয়েছে, আবার পুরো মৌসুমে খাল-বিলে পানি কম। সেক্ষেত্রেও সমস্যা। এই কারনে পাট চাষে মোট উৎপাদনে প্রভাব ফেলে ফলন কম হয়। গতবছরের শেষের দিকে পাটের দাম ভাল পাওয়া গেলেও বর্তমানে দাম নেই। এক শতক জমিতে পাট আবাদ করতে যে টাকা খরচ হয় উৎপাদন করে সেই টাকা আর আয় হয় না অর্থাৎ মোট উৎপাদন আয়ের চেয়ে মোট উৎপাদন ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারনে অনেকেই পাট চাষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সরকারিভাবে আরও সাহায্য সহযোগিতার কথা বলেন কেউ কেউ।
উপজেলার অন্যতম পাট ব্যবসায়ী রেজাউল তালুকদার রেজা বলেন, লকডাউনে মিল কারখানা বন্ধ থাকায় আমরা ক্রয়কৃত পাট বিক্রয় করতে পারছি না, নতুন করে কেউ নিচ্ছেও না। এই অবস্থার কারনে পাটের দাম কম হতে পারে। বর্তমানে পাটের বাজারমূল্য ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শত টাকা রয়েছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে দাম কমতেও পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সালথায় মোট আবাদি জমি ১৪ হাজার হেক্টর। প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাটের আঁশ পরিপূর্ণ হওয়ার সময় অতি বৃষ্টির ফলে পাট ক্ষেতে পানি জমে যায়। ফলে এ বছর পাটের চাষ তুলনামূলক কম হয়েছে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, এবার গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ কিছু বেশি হয়েছে, পাটের ফলন ও দাম নিয়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা লক্ষ্য করা যায়। এলাকার কৃষকরা যাতে যথাযথভাবে স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট উৎপাদন করতে পারে এ জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের নিকট গিয়ে পরামর্শ প্রদান করছি। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে পাটকে মুক্ত রাখতে ও পরিমিত পরিমান ঔষধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছি। আশা করছি আগামীতে এই সমস্যা আর থাকবে না।
এই বিষয়ে উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, কৃষক যত্রতত্র বীজ ব্যবহারের ফলে পাটের উৎপাদন কম হচ্ছে, সরকারিভাবে যে রবি-১ পাটবীজ দেওয়া হয়েছে তার উৎপাদন ভাল হচ্ছে, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে এই বীজ ব্যবহার ও পাট উৎপাদনে উৎসাহি করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনে পাট রপ্তানী বন্ধ রয়েছে, লকডাউন শিথিল হলে দাম সন্তোষজনক হবে বলে আশা করছি।