আগ্রাসী মেঘনার তীব্র স্রোতে বিলীন হচ্ছে ভোলা দৌলতখানের চরাঞ্চল, ১০গ্রামে আতঙ্ক
মোঃ মিরাজ হোসাইন (দৌলতখান):
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভোলার দৌলতখানে রুদ্ররূপ ধারণ করেছে মেঘনা। ইতোমধ্যে এ নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ। দিন দিন নদীভাঙন আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় দুর্ভোগ আরো চরমে উঠেছে।
ফসলি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে মেঘনা তীরবর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকশ পরিবার। ভাঙনকবলিত এসব পরিবারের মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া নদীগর্ভে চলে গেছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আশ্রয়ণকেন্দ্র ও রাস্তাঘাট। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন দৌলতখানের আরও অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ।
গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে মেঘনায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। শেষ আশ্রয়টুকু হারাতে বসা এলাকাবাসীর দাবি- ‘ত্রাণ নয়, আমাদেরকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা হোক।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীবেষ্টিত প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম ভোলা দৌলতখানের ঐতিহ্যবাহী হাজিপুর চরের শত শত বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে মুখরিত স্থানটি বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এ চরে শীত মৌসুমে হাজারো ভ্রমণ পিপাসুরা চরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ছুটে আসে।
হাজিপুর চরের বাসিন্দা মো. আব্দুল কাদের বলেন, আমরা এ চরে সূচনালগ্ন থেকেই বসবাস করে আসছি। চরের ফসলিজমিতে চাষাবাদ করে আমাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। আমাদের অধিকাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেটুকু রয়েছে সেটুকুতে সরকার যদি বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোনও রকমে চলে যেতে পারব।
তিনি বলেন, আমরা এক সময় এখানে ধান, পাট, আলু, কড়লা তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতাম। এখন বেশির ভাগ জমিই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনার ভাঙনে দৌলতখান উপজেলার ১০টি গ্রামের মানুষ আতঙ্কে বসবাস করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন হাজিপুর, সৈয়দপুর,ভবানীপুর, মদনপুর ও মেদুয়া গ্রামের মানুষ। প্রতিনিয়ত ভয় ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
এসব এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, মানুষগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঘনার তীরে বসবাস করছেন।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিবি রহিমা বেগম জানান, নদীর ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়েছে। এর পর নিচু জমিতেই কোনোমতে ম্যাচাং করে ঘরটি রেখেছেন। নদীর পানি বেড়ে গেলে তার ঘরটি প্লাবিত হয়ে যায়। পানির কারণে রান্না করার মতো বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকে না। অনেক সময় পানিবন্দি হয়ে পড়লে না খেয়েই দিন কাটাতে হয়। বর্তমানে আর্থিক সংকটের কারণে এবং বিকল্প জমি না থাকায় ঘরটিও সরাতে পারছেন না তিনি। বিবি রহিমার মতো এ উপজেলায় নদীর তীরে এমন বহু পরিবার আছে যারা ভিটামাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নান্নু মাস্টার জানান, মদনপুর চরের অনেক পরিবার মেঘনার ভাঙনের কারণে তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন তারা। থামছেই না নদীভাঙন, এতে বাড়ছে মানুষের কান্না। নতুন করে পানি বৃদ্ধিতে বাড়িঘরের পাশাপাশি হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশ্বাসের পরও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ নদীর পাড়ের মানুষ। তবে কিছু জায়গায় সিসিব্লোক দেওয়া হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাছান মাহমুদ বিডি ফিন্যান্সিয়াল পত্রিকাকে জানান, ‘নদীতে নতুন করে পানি বাড়ার ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে দৌলতখানে ইতোমধ্যে মেঘনার ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ৫২২ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। অক্টোবরের শুরুতেই কাজ শুরু হবে। তবে ইতিপূর্বে দৌলতখানে নদী ভাঙন কবলিত কিছু এলাকায় ব্লোক দেওয়া হয়েছে।