গৌরীপুরে পিডিবি’র বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পে উৎকোচ গ্রহন !
মশিউর রহমান কাউসার (গৌরীপুর):
সরকারি খরচে পিডিবি’র বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপন করার কথা থাকলেও নানা অযুহাতে অর্থ আদায় করা হচ্ছে গ্রাহকদেও কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, বিতরণ লাইনের ড্রয়িংয়ের খরচের কথা বলেও আদায় করা হচ্ছে টাকা। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গস্খাহকরা গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তোলে এই টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। আর এই টাকা যাচ্ছে অসাধু কর্মকর্তার পকেটে!
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে এমনি অভিযোগ। খুঁটি স্থাপন, ট্রান্সফরমারের স্থান পরিবর্তন ও ড্রয়িংয়ের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল আমিন আজাদের বিরুদ্ধে।
দরপত্রের মাধ্যমে নতুন বিতরণ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্ব। যাবতীয় কাজ শেষ হলে স্থানীয় আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মাধ্যমে নতুন সংযোগ নিতে হয় গ্রাহকের। এক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী গ্রাহক সংযোগের আবেদন ফি, মিটারের দাম ও ব্যাংক হিসাবের জামানত প্রদান করে থাকেন। এর বাইরে বিতরণ লাইন স্থাপনে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই।
তবে এক্ষেত্রে শাহবাজপুর গ্রামবাসীর কাছ থেকে নানা অযুহাতে টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় কয়েকজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে নেওয়া হয় এ টাকা। আর এতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী প্রকৌশলী আল আমিন আজাদ ও প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার আঃ সাত্তারের বিরুদ্ধে। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ১০০ মিটারের মধ্যে তারা মাত্র ৮০ জন আবাসিক গ্রাহক ও ১৫টি সেচের জন্য ২৫০ কেভি ও ১০০ কেভির দুইটি ট্রান্সফরমার বসিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২০ বছর যাবত গজন্দর, বেকারকান্দা ও শাহবাজপুর এই তিন গ্রাম মিলিয়ে একটি ২৫০ কে.ভি ট্রান্সফরমার দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চলছিলো। বেকারকান্দা গ্রামে ছিলো বিদ্যুৎতের এই ট্রান্সফরমারটি। শাহবাজপুর গ্রামে ভোল্টেজ কম পাওয়ায় তাদের জন্য অন্য একটি ২৫০কে.ভি ট্রান্সফরমার বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এর বাইরে আরও একটি ১০০কে.ভি’র ট্রান্সফরমার বসানো হয় একই গ্রামে।
শাহবাজপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম জানান, শাহবাজপুর গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য ড্রয়িং এর কথা বলে প্রজেক্টের শ্রমিক ছোটি ও মেহেদীর মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় গৌরীপুর বিদ্যুৎ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল আমিন আজাদ। এছাড়াও ট্রান্সফরমারটি স্থাপনের জন্য আরও ৩০ হাজার টাকা নেন তারা।
একই গ্রামের মৃত আঃ খালেকের ছেলে ফারুক বলেন, টাকা না দিলে বিদ্যুৎ এর ট্রান্সফরমার লাগানো হবে না, দেয়া হবে না কোন সংযোগ ও মিটার। এসবের প্রতিবাদ করায় বিদ্যুৎ অফিসের আল আমিন আজাদের পরামর্শে প্রকল্পের শ্রমিক মেহেদী আমাদের গ্রামের কয়েকজনের নামে একটি অভিযোগ দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে হয়রানিও করা হয়েছে। অথচ উল্লেখিত গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের ড্রয়িং করা হয়েছে এক বছর পূর্বে। ড্রয়িং করার পর নতুন বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপনের দরপত্র আহবান করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি আঃ সাত্তার টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, কেবল লোকজনের কাছ থেকে খোরাকির টাকা নেওয়া হয়েছে।
গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল আমিন আজাদ জানান, বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের দায়িত্ব প্রকল্পের। এতে আমাদের কোন এখতিয়ার নেই। এখানে তিনি কোন টাকা পয়সার লেনদেন করেনি বলে জানান তিনি।
গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মোঃ বিল্লাল হোসেন জানান, বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপন আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে করা হয়। এ বিষয়ে আমার অফিসের কেউ অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত থাকার কথা নয়। আর যদি থেকে থাকেন তবে প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প বিভাগ-১) রায়হান নবী খান জানান, বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে কোন রকম আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। এর সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন কওে থাকে। বর্তমানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রান্সফরমার আছে। ট্রান্সফরমারের জন্য গ্রাহককে কোন টাকা দিতে হবে না, আমাদের জানালে আমরা তা স্থাপনের ব্যবস্থা কওে দিব। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে তিনি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, উল্লেখিত এলাকায় ড্রয়িংয়ের কথা বলে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে এটা অন্যায় করেছে।