জেগে উঠেছে পাবনার তারুণ্য রাত দিন ছুটছে অক্সিজেন নিয়ে
রনি ইমরান (পাবনা):
মহামারী কালে আলোর দিশা হয়ে ছুটছে পাবনার তরুণ দল। রোদ বৃষ্টি নেই দিন রাত নেই মুমূর্ষু রোগীর দম আটকে যাওয়ার খবরে অক্সিজেন নিয়ে বাসায় হাজির হচ্ছে তারা। এই তারুণ্যর দল অসহায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে চায়। অদৃশ্য সর্ম্পকের মায়াতে পর আপন হয়ে যাচ্ছে এই মহামারীকালে সত্যি তা অভূতপূর্ব! কোভিড পরিস্থিতিতে জেলায় রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সঙ্কটকালে রোগীর জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। তরুণরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে রোগীর বাসায় আবার কখনো হাসপাতালে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে এসকল সেচ্ছাসেবকরা। যার অক্সিজেন কেনার সামর্থ্য নেই তারা ফোন দিয়ে জানালেই অক্সিজেন নিয়ে বাড়ির দরজায় হাজির হচ্ছে এসকল আলোকবার্তিকা। পাবনা শহরে কোভিড রোগীদের যখন অক্সিজেনের চাহিদা বাড়তে লাগলো তখন খবর পেয়ে অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাসায় পৌঁছে যান শিশির ইসলাম। সেচ্ছাসেবক শিশির গত ২৬ জুন পাবনা সদর হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটে থাকা একজন মুমূর্ষু রোগীকে বিনামূল্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে আসেন। এরপর পাবনা শহরের রাধানগর ও রাঘবপুর এলাকার দুইটি অসহায় পরিবারের রোগীদের বিনামূল্য অক্সিজেন পৌঁছে দেন শিশির ইসলাম। গতবছর যখন করোনা মহামারী শুরু হলো সে সময় করোনার উপর্সগ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা কয়েকজনের লাশ দাফনের কাজও করেন সেচ্ছাসেবক শিশির ইসলাম। বিএসএল অক্সিজেন ব্যাংক নামক সংগঠনের ব্যনারে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাবিবুর রহমান রিংকুর তত্বাবধায়নে অক্সিজেনের জন্য ছটফট করা রোগীদের বিনামূল্য অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ করেছেন তাদের দল।কখনো হাসপাতালে রোগীর মাঝে কখনো রোগীর বাসায় গিয়ে। জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক রাহাত হোসেন পল্লব,পৌর ছাত্রলীগ নেতা রায়হান হোসেন পিয়াস, নূর মোহাম্মদ নয়ন, সনেটের একটি দল এই মানবিক কাজে সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে।এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মেহেদী হাসান হাসপাতালে সঙ্কটে থাকা রোগীকে অক্সিজেন পৌছে দিয়েছেন। জেলা সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রুমন ও পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ইমরুল হাসান রন্টির নির্দেশনায় মাস্ক,হ্যান্ড-স্যানেটাইজার নিয়ে এগিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাওন রেজা খান। কোভিডে সঙ্কটে থাকা রোগী ও স্বজনদের পাশে গিয়ে দাঁড়িছেন। জেলা ছাত্রলীগ থেকে করোনায় মৃত বেক্তির লাশ দাফনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ আলী ও তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম করা হয়েছে। পাবনায় যেসকল কোভিড রোগীর লাশ দাফনে কেও পাশে থাকবেনা তখন দাফন কাফনের দায়িত্ব নেবে জেলা ছাত্রলীগ।করোনা রোগীর লাশ দাফনের দায়িত্ব নিয়েছেন তরুণ ছাত্রলীগ নেতা পলাশ হোসেন। পাবনা জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ অক্সিজেন নিয়ে দিনরাত ছুটে যাচ্ছেন রোগীদের বাসায়। অক্সিজেনের অভাবে রোগীর সঙ্কটময় অবস্থার খবর পেয়ে অক্সিজেন নিয়ে দরজায় পৌঁছে যাচ্ছেন জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ। তাদের দলে প্রায় ৪০ জন সদস্য রয়েছে। পাবনায় এটাই সবচেয়ে বড় দল।জেলা যুবলীগের আহবায়ক আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনির নির্দেশনায় আহবায়ক শিবলী সাদিক রাত দিন ছুটছেন অক্সিজেন নিয়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতায় তারা আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে চলছেন স্বগৌরবে। দেশরতœ আক্সিজেনের ব্যানারে অক্সিজেন নিয়ে অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিঃ রুহুল আমিন। মানুষকে সচেতন করতে এগিয়ে এসেছে তারুণ্যর অগ্রযাত্রা নামের একটি সেচ্ছাসেবক সংগঠন। কোভিড পরিস্থিতির শুরু থেকেই তারা জনসচেতনতায় কাজ করে চলছে। মাস্ক বিতরণ করছে এবং মসজিদের অযুখানায় সাবান বিতরণ করছে এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারুণ্যের অগ্রযাত্রার প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক যুবায়ের খান প্রিন্স। মহামারীকালে প্রাণের স্পন্দন জাগাতে তরুণ সমাজ এগিয়ে চলেছে আশার প্রতীক হয়ে। মানুষের আস্থা হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে চলছে স্বগৌরবে। তাদের এই মানবিক উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে বলে মনে করেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুারো চীফ উৎপল মির্জা। তিনি বলেন এই সংকট কালে অনেক মানুষ যখন আত্মকেন্দ্রিক তখন মানুষকে বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে তারা দাঁড়াচ্ছে এটাই আসলে মানবিক মহৎকর্ম। এটাই মনুষ্যত্বের আসোল পরিচয়। তাদের অক্সিজেনে দম বন্ধ হওয়া রোগী প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। মানুষকে বাঁচাতে তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মহৎ। পাবনা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ডাঃ রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, এটা তাদের মহৎ উদ্যোগ। কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন অনেক দরকারি চিকিৎসা সামগ্রী। যারা এই সঙ্কটময় কালে রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে তারা মানবিক ও মহৎকর্ম করছেন।