স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট খুলে দেওয়ার দাবি ক্রেতা-খামারি-ইজারাদারদের
নইন আবু নাঈম (বাগেরহাট) :
করোনা প্রতিরোধে সারা দেশের মতো বাগেরহাটের শরণখোলাতেও চলছে কঠোর লকডউন। এদিকে, কোরবানিও সমাগত। লকডাউনে বন্ধ রয়েছে হাট-বাজার, যানবাহন, লোক চলাচল সবই। বন্ধ রয়েছে উপকূলীয় এই উপজেলার প্রধান কোরবানির পশুর হাটও। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির পশু কেনা-বেচা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা ও শতাধিক ক্ষুদ্র খামারি।
অপরদিকে, প্রায় অর্ধকোটি টাকায় পশুর হাটের বাৎসরিক ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আট জন ইজারাদার। তাদের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে এই কোরবানির পশুর হাট। এবছর হাট না বসায় চরম লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন এই ইজারাদার গ্রুপ। তাই স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে প্রশাসনের কাছে শুধুমাত্র পশুর হাট বসার অনুমতি দাবি করেছেন ক্রেতা-খামারি ও ইজারাদররা।
শরণখোলা উপজেলা ধানসাগর ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া বাজারের পশুর হাটটি জেলার মধ্যে অন্যমত একটি পশুর হাট। সপ্তাহের বৃহস্পতি ও সোমবার দুইদিন হাট বসে এখানে। কোরবানির কমপক্ষে একমাস আগে থেকেই জমে ওঠে এই পশুর হাট। এলাকার ছোটখাটো খামারি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কোরবানি উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু কিনে এই এই হাটে বিক্রি করেন। প্রতি হাটে ৭ শ থেকে ৮ শ গরু-ছাগল কেনা-বেচা হয়। এছাড়া, গৃহস্থের পালিত গরু-ছাগল সারা বছরই বিক্রি হয় এখানে। কিন্তু এবছর করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পশুর হাট বন্ধ রয়েছে। এতে হতাশায় পড়েচেন সবাই।
সোমবার (৫জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে সরেজমিন আমড়াগাছিয়া পশুর হাটে গিয়ে দেখে যায়, জনমানব শূন্য এক বিরাণ ভূমি। পশু বাধার আড়াগুলো খালি পড়ে আছে। টোলঘরটিও পলিথিনে মোড়া। দুই-একজন ক্রেতা এসে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। কবে হাট বসতে মোবাইলে যোগাযোগ করছেন ইজারাদারদের সঙ্গে। তবে, নিশ্চিত কোনো তথ্য পাচ্ছেন না কেউ। অন্যান্য বছর কোরবানির আগমুহূর্তের এই সময়টাতে এই হাটে শত শত পশু আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভীড় গলিয়ে চলার কোনো সুযোগ ছিলনা।
পশু কিনতে আসা উপজেলার বাধাল গ্রামের মো. জালাল মিয়া (৬০) জানান, কোরবানির বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। তাই পশু কেনার উদ্দেশে আসেন তিনি। কিন্তু কোনো না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে পশু কেনার চেষ্টা করবেন বলে জানান। উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের কবির পহলান ও কালিবাড়ি গ্রামের লিমন জমাদ্দার এসেছিলেন হাটের খোঁজখবর নিতে। তারা ইজারাদারকে ফোন করে জানতে চান কবে হাট বসবে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে অনিশ্চয়তার খবরই পেয়েছেন তারা।
উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামের কোরবানির পশু ব্যবসায়ী পরিমল চন্দ্র গাইন জানান, তিনি প্রায় ৩০বছর ধরে কোরবানির পুর কারবার করছেন। প্রতিবছর তিনি সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু কিনে এই হাটে বিক্রি করেন। গতবছর ২৫টি গুরু বিক্রি করে এক লাখ টাকার লাভ করেছেন। কোরবানির পশুর কারবারই তার বছরের প্রধান আয়ের উৎস। কিন্তু এবছর আর তা করতে পারছেন না।
ওই ব্যবসায়ী জানান, শরণখোলায় তার মতো আরো ২৫ থেকে ৩০জন কোরবানির পশুর কারবারি রয়েছেন। তারা কেউই এবছর পশু কেনেননি। সবাই হতাশায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতির শিকার হননি কোনোদিন তারা।
উপজেলার নলবুনিয়া এলাকায় ক্ষুদ্র পশুর খামারি মো. কাইউম খান জানান, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানি সামনে রেখে পশু লালন-পালন করে আসছেন। বর্তমানে তার খামারে ১৫টি গরু আছে। গ্রাম থেকে একেকটি গরু ৪৫ হাজার থেকে ৫০হাজার টাকায় কিনে প্রায় ৮মাস ধরে উন্নত খাবার খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। প্রতি পশুর পেছনে তার ১৫ থেকে ২০হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন একেকটি পশুর ওজন ৪-৫মণ করে। পশুর হাট না বসায় তার এই পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আর সময় মতো বিক্রি করতে না পারলে কয়েক রাখ টাকা লোকসান হবে তার।
পশুর হাটের ইজারাদার গ্রুপের একজন মো. রুবেল খান জানান, ৪৫লাখ ৫০হাজার টাকায় বাৎসরিক ইজারা নিয়েছেন আমড়াগাছিয়া বাজার ও পশুর হাট। কোরবানির পশুর হাটই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। ইতিমধ্যে বছরের তিন মাস পার হয়ে গেছে। পশুর হাট বন্ধ থাকায় তাদের চরম লোকসানে পড়ে পথে বসতে হবে। তাই সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু হাটা খুলে দেওয়ার দাবি জানান ইজারাদাররা।
শরণখোলা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তফাজ্জল হোসেন বলেন, এই উপজেলায় ১১০টির মতো ক্ষুদ্র খামার রয়েছে। এসব খামারিরা কোরবানির হাটে ভালো দামে তাদের পশু বিক্রি করার আশায় রয়েছেন। কিন্তু লকডাউনে এবছর কেউ পশু বিক্রি করতে পারছেন না। কোরবানির এখনও যে কয়দিন বাকি আছে হাট চালু হলে তা বিক্রি হবে। তা না হলে লোকসানে পড়বেন তারা।
এব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখন চরম পর্যায়ে। একারণে কোরবানির পশুর হাটসহ সকল প্রকার হাট-বাজার বন্ধ রয়েছে। সরকার অনুমতি দিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র পশুর হাট সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হবে। ##