পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে সাড়া ফেলেছে 'বস'-'বিগবস' নামের দুটি গরু
মোঃ লিহাজ উদ্দিন (পঞ্চগড়) :
সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের হাজরাডাঙ্গা উনিশ ঘর এলাকার দরিদ্র কৃষক বাবুল হােসেন। টানাপােড়নের সংসারে দু’টি গরুকে সন্তানস্নেহের মতাে করে বড় করে তুলেছেন। গরু দু’টির নাম রেখেছেন 'বস' এবং 'বিগবস'। আগামী ঈদ উপলক্ষে তিনি গরু দু’টি বিক্রয়ের চিন্তা করেছেন। 'বিগ বস' এর বয়স চার বছর। ওজন ২০ মণ। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও লম্বায় ৮ ফুট। তিনি এটির দাম হাকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। আর 'বস' এর বয়স ৩ বছর। ওজন ১৪ মণ। উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি ও লম্বায় ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। এটির দাম হাকাচ্ছেন ৭ লাখ টাকা। প্রত্যন্ত এলাকায় এতাে বড় গরু আগে দেখেনি স্থানীয়রা। প্রতিদিন গরু দু’টি দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।
ক্ষুদ্র কৃষি আর স্থানীয় একটি তাঁত কারখানায় কাজ করে কােন মতে চলে বাবুলের সংসার। তিন সন্তান, স্ত্রী, মাসহ ছয় সদস্যের পরিবার। ঘরগুলােও ভাঙাচােরা। অভাবের সংসার সম্পদ বলতে ওই গরু দু’টি। ভালো দামে গরু দু’টি বিক্রি করতেই তিন/চার বছর ধরে সন্তানের মতাে লালন পালন করেছেন বাবুল ও তার স্ত্রী বুলবুলি বেগম। নিজেরা না খেলেও গরু দুটিকে কখনাে অনাহারে রাখেননি তারা। বাবুলের আশা কােরবানির বাজারে ভালো দরে বিক্রি হবে তার গরু। গরু বিক্রি করে ভাঙা ঘর ঠিক করাসহ বড় পরিসরে গরুর খামার দিতে চান বাবুল।
কৃষক বাবুল হােসেন জানান, ষাঁড় দু’টি আমার বাড়ির গরু থেকেই হয়েছে। আমি ছােট থেকেই তাদের প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার খাইয়ে বড় করে তুলেছি। অভাবের সংসার তাই ধারদেনা করে হলেও গরু দু’টির খাবার জােগান দিয়েছি। এই কােরবানির বাজারে গরু দু’টি বিক্রি করে দিব। অনেক ব্যবসায়ী আসছে, তবে কাংখিত দাম এখনাে বলেনি। ভালো দাম পেলে গরু দু’টি বিক্রি করে দিব। গরু বিক্রি করে ঘরদাড় ঠিকঠাক করে বড় আকারের খামার দিতে চাই। আমার বিশাল দেহী 'বস' আর 'বিগ বস' এরই মধ্যে এলাকায় সাড়া ফেলেছ। এলাকায় এত বড় গরু আগে দেখেনি কেউ। তাই প্রতিদিন গরু দু’টিকে দেখতে দুর- দুরান্ত থেকে লােকজন আসছেন। আসছেন গরু ব্যবসায়ীরাও।
বাবুলের স্ত্রী বুলবুলি বেগম বলেন, গরু দুটি নিয়েই আমাদের সারাদিন কাটে। আমরা দুজন সামাল দিতে পারি না। তাই আরও দুজন শ্রমিক সাথে নিতে হয়। গরু দু’টি ভাল দামে বিক্রয় করতে পারলে বড় খামার করার ইচ্ছা আছে। আশা করছি ঈদের আগেই ভালো দামে গরু দু’টি বিক্রয় করতে পারব।
স্থানীয় উদ্যাক্তা আব্দুল মজিদ বলেন, বাবুল ভাই কৃষির পাশাপাশি আমার তাঁত কারখানাতেই কাজ করেন। এখানে কাজ করে যা আয় হয় তার সবই প্রায় তিনি ওই গরুর পেছনে খরচ করেন। তার ফ্রিজিশিয়ান জাতের গরু দুটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি বিশাল আকৃতির হয়েছে। ভাল দামে বিক্রি করতে পারলে দরিদ্র এই কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে।