শিরোনাম

South east bank ad

কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা

 প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এম এ জামান (সাতক্ষীরা) :
ঈদুল আযাহায় মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কুরবানী করে থাকেন। ঈদুল আযাহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ঈদুল আযাহা মানে পশু কেনাবেচার ধুম। রাজধানী থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বসে কুরবানির পশুহাট। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাস প্রভাবে পূর্বের ন্যায় জমজমাট পশুহাট হচ্ছে না এবার। আর এতে শঙ্কায় রয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে শুরু করে হাট ইজারা গ্রহীতারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন অনলাইনে কেনাবেচার মাধ্যমে এ শঙ্কার কাটিয়ে ওঠা যাবে।
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে লাখ লাখ মানুষ গরু-ছাগল-ভেড়া পালন করেন। বর্তমান শিক্ষিত যুবকরা গরু মোটাতাজাকরণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকে। যে কারণে সারাদেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় বড় গরু-ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। সারাবছর কসাইদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে কিছু কিছু স্পেশাল গরু তৈরি করেন খামারিরা। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণই ভিন্ন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার যেন সব হিসবে উল্টে গিয়েছে।
বর্তমান করোনা মহামারি আকার ধারণ করায় কুরবানির পশুহাট বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ স্থানে। এছাড়া কুরবানিকে কেন্দ্র করে পোষা প্রাণির পেছনে দীর্ঘ পরিশ্রম ও আর্থিক বিনিয়োগ তুলে আনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে খামারিদের। তাছাড়া এই পরিস্থিতিতে সঠিক দাম না পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা। ঈদে তারা গরু বিক্রি করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না তাদের।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ পশু কেনাবেচার স্থান দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার গরুহাট। মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ রহমত ও সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কুরবানী করেন। আর এই ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠে পারুলিয়ার পশুরহাট। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ও জেলার বাইরে থেকে খামারীরা তাদের পালিত পশু বিক্রয় করতে আসে এই হাটে। হাটের পরিবেশ ক্রেতা ও বিক্রেতা বান্ধব এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় এ হাটের চাহিদা দীর্ঘ দিনের। হাটে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন ধরনের পশু সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রয় হয়। এছাড়া বিভিন্ন জাতের হাঁস, মুরগি, কবুতর ও পাখি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এখানে বিক্রি হয় ছোট-বড় সকল বয়সীদের পোশাক, জুতা, কসমেটিক্স, ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ, মাছ, মাংস, সবজিসহ সাংসারিক সকল জিনিসপত্র। সাপ্তাহিক রবিবার এ হাটে ক্রয়-বিক্রয় করে কয়েক হাজার মানুষ তাদের সংসার পরিচালনা করে থাকেন। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চালে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার পশুরহাট বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস। বিগত বছরগুলোতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। প্রতি রবিবার পারুলিয়া বৃহৎ পশুর হাট জমজমাট রূপ লাভ করে। কিন্তু করোনা সেই চেনা রুপ বদলে দিয়েছে।
দেবহাটা উপজেলার কোমপুরের খামারি আসাদুজ্জামান বলেন, এবার কোরবানির আশায় ১৬টি গরু লালন-পালন করেছি। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাছাড়া প্রতিদিন খামারে প্রায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়। যদি ঈদে গরু বিক্রি না হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
খামারি দেবপ্রসাদ ঘোষ দেবু গরু মোটাতাজাকরণ করে আতঙ্কে আছেন তিনিও। তিনি বলেন, আমরা যারা খামারি, তারা সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশায় ভালো ভালো খাওয়া দিয়ে গরু পালন করি। যদি সেগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের প্রচুর লস হয়।
খুলনা বিভাগের বৃহৎ পশুরহাটের অন্যতম পারুলিয়া গরুহাটের ইজারাদার জেলা পরিষদ সদস্য আলফেদৌস আলফা জানান, করোনায় কারণে গরুহাট বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি হাটে আমার কয়েক লক্ষাধীক টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রান্তিক কৃষক বা অসহায় নারীরা গরু পালন করে ঈদেরহাটে বিক্রি করে লাভবান হয়। কিন্তু করোনার কারণে প্রশাসন হাট বন্ধ করে রাখায় উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্ততরের কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সারাবিশ্বে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমরাও সে পরিস্থিতির শিকার। তিনি আরও বলেন, সমস্যা আসবে কিন্তু সেসব সমস্যা সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গো-খামারিদের রক্ষার জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। দেবহাটায় ৭২৫ এই সুবিধার আওতায় এসেছেন। অনেকে পরবর্তীতে পাবেন। খামারিদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে জরিপ চলছে। এবছর দেবহাটায় ৮৩১ খামারিদের ৯৬৮টি গরু, ৭২৪টি ছাগল, ভেড়া ২৫৫টি সহ সর্বমোট ২০২৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই আতঙ্কের কারণ নেই। হাট বন্ধ থাকলেও অনলাইনে এবার পশুর কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে খামারিদের বাড়তি খরচ কমবে। অনলাইনে পশু কিনতে ফেসবুকে ‘দেবহাটা অনলাইন কুরবারি পশুহাট’ পেজে বিভিন্ন দামের পশুর বিবরণ দেওয়া আছে। পছন্দ মত কেনা বেঁচা যাবে। তাছাড়া আমাদের অফিসের কর্মীরা প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে খামারির পশুর ছবি তুলে বিস্তারিত অনলাইনে আপলোড করছে। আশা করি এখান থেকে ভালো মানের বেচাকেনা হবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: