মায়ের শেষ বিদায়ে কাছে গেলেন না মেয়ে!
তানভীর আঞ্জুম আরিফ (মৌলভীবাজার) :
তখন রাত দশটা। চারদিকে গভীর অন্ধকার। বাহিরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। সেই সঙ্গে আছে বজ্রপাত। আকাশে বিদ্যুৎত চমকাচ্ছে মাঝেমধ্যে ।
আকাশ চমকানো হালকা আলোয় দেখা গেল সাদিপুর। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সটির আশপাশ জুড়ে মানুষের কোনো সাড়া শব্দ নেই। অনেকটা একদম একা পায়ে দাঁড়ানো অ্যাম্বুলেন্সটি। অনেক চেষ্টার পরও কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। শুধু তাই নয় এমনকি চালকও উধাও। অ্যাম্বুলেন্সটির পাশটায় ভিড়তেই দেখা গেল ভেতরের সিটে কাপড়ে মোড়ানো একটি লাশ একা পড়ে আছে।
বাড়ির খোঁজ নিয়ে লাশটি উঠিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে এগিয়ে গেল সবাই। তারপর ভোর পর্যন্ত চলে এ লাশটির দাফন কাফন। করোনায় মৃত্যু এক মহিলার আত্মকাহিনী তুলে ধরে কথা বলছিলেন মৌলভীবাজার স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন বোরহান উদ্দিন সোসাইটির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান মুহিব। তিনি জানালেন, গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) তাদের সংগঠনের কাছে ফোন আসে উসমানী নগর থানার সাদিপুর থেকে। জানানো হয়, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে এক মহিলা করোনায় মারা গেছেন। তার দাফন কাফন করে দিতে হবে। খবরটি পেয়ে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন বোরহান উদ্দিন সোসাইটি রাতেই রওয়ানা দেয় সাদিপুর। সেখানে উপস্থিত হয়েই তাদের পড়তে হয় বিপাকে। মৃত্যুবরণ করা এ নারীর কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি খোঁজে। এমনকি সংক্রমণের ভয়ে গ্রামের কোনো লোকজনই এগিয়ে আসেনি। তারা জানান, অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রথমে লাশ নিয়ে বাড়িতে যাওয়া। গোসল দেওয়া এমন কি কবর খোঁড়া পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসতে চায়নি।
তিনি আরো জানান, গোসল দিতে প্রথমে মৃত নারীর মেয়েরা বাড়িতে উপস্থিত থাকলেও তারাও ভয়ে গোসলে অনিহা প্রকাশ করে। তখন অনেক বুঝিয়ে তাদের সহযোগিতায় গোসল দেওয়া হয়। কবর খোঁড়ার কোনো মানুষও গ্রামে খোঁজে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যায়ে জোরপূর্বক দু-একজনকে ধরে নিয়ে এসে তাদের সাহায্যে তারা কবর খোঁড়েন। সেখানেও দেখা দেয় চরম বিপত্তি। বৃষ্টিপাত ও পানির চাপ কবর খোঁড়তে বিড়ম্বনা দেখা দেয়। মাটি ভেঙে কবর খোঁড়া বাধাগ্রস্ত হয়। অবশেষে ভোর চারটায় করোনায় মৃত্যু হওয়া এ মহিলার দাপন কাজ সম্পন্ন হয়। নিহত মহিলার কোন ছেলে সন্তান না থাকায় জানাজায় শুধুমাত্র মেয়ের অবুঝ ক’জন নাতি উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের চেয়ারম্যান জানান, করোনাকালীন অনেক দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু এভাবে কোনো জায়গায় তারা বিপাকে পড়েননি। তিনি জানান, করোনা সংক্রমণের ভয়ে শেষ বিদায়েও নিকটাত্মীয় স্বজনও কেউ পাশে দেখা যায়নি।