সালিশে কিশোরীকে বিয়ে, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা
সুনান বিন মাহাবুব (পটুয়াখালী):
পটুয়াখালীর বাউফলে সালিশ বৈঠকে কিশোরীকে বিয়ে এবং বিয়ের একদিন পরই তালাকের ঘটনায় কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারসহ সাতজনের নামে মামলা হয়েছে। সোমবার (২৮ জুন) কিশোরীর প্রেমিক রমজান হাওলাদারের বড় ভাই হাফেজ আল ইমরান বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামাল হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পটুয়াখালী জেলা পিবিআই প্রধানকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে কিশোরীর জন্ম সনদ ও রমজান হাওলাদারের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে রবিবার (২৭ জুন) এ ঘটনায় তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিবেদনগুলো নজরে নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ নির্দেশ প্রদান করেন। আদালত শুনানিতে বলা হয়, পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে বোঝা যাচ্ছে সালিস করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন চেয়ারম্যান। প্রথমত কিশোরী নাবালিকা জেনেও জোরপূর্বক বিয়ে করেন। কিশোরীর প্রেমিক রমজান হাওলাদারকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়নপাশা গ্রামের রমজান নামের এক যুবকের সঙ্গে চুনারপুল এলাকার নজরুল ইসলাম হাওলাদারের মেয়ে নাজনিন আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিয়ষটি নিয়ে শাহিন হাওলাদার চুনারপুল বাজারে গত শুক্রবার(২৫ জুন) শালিস বৈঠকের আয়োজন করেন। শালিস বৈঠকে নাজনিনকে দেখে পছন্দ হওয়ায় চেয়ারম্যান শাহিন নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং বিয়ে সম্পন্ন করেন। এর পর বিয়েতে মেয়ের বয়স নিয়ে জালিয়াতি এবং বিয়েতে জোড় করার অভিযোগ উঠে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেয়ের বয়স ১৮ বছর বলে সনদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে যে স্কুলে পড়ত সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র জানান, মোসাম্মদ নাজনিন আক্তার তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে অষ্টম শ্রেনীর নিয়মিত শিক্ষার্থী, তার রোল ৮২১। বিয়ের কাবিননামায় মেয়েটির জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। কিন্তু বিদ্যালয়ে থাকা জন্মনিবন্ধন ও পঞ্চম শ্রেণি পাসের সনদ বলছে মেয়েটির জন্ম ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল। এদিকে সালিশে গিয়ে নিজের প্রেমিকাকে হারানোর ঘটনায় বিষপানে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন রমজান।
মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার, তার পাঁচ সহযোগী ও চেয়াম্যানের বিয়ের কাজী মাওলানা আয়ুবকে আসামি করা হয়েছে।