পাবনায় ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে সর্বোচ্চ আক্রান্ত, সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ
রনি ইমরান (পাবনা):
গত ২৪ ঘন্টায় পাবনায় ১৩৫ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন, জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ।গত বছর ১৬ ই এপ্রিল পাবনায় প্রথম রোগী শনাক্তের পর জেলায় একদিনের আক্রান্তের হিসেবে এটিই সর্বোচ্চ। শনাক্তের হারও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। জেলায় মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৪০ জন। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের দিক দিয়ে ৭ শত জন ছাড়িয়ে গেছে রোগীর সংখ্যা । দিন যতই বাড়ছে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে পাবনায়। একদিনে পাবনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও এর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে উদ্বেগ বেড়ে চলেছে অথচ বাড়েনি সামাজিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন পাবনায় ভাইরাসটি সামাজিক ভাবে ছড়িয়ে পড়লে বেশী সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হবে এবং বেশি সংখ্যক মানুষকে সেবা দানের মত পর্যাপ্ত অবস্থা নেই জেলার হাসপাতালগুলোতে। প্রতিটা মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ । জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ ধারনা করছে, নতুন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ক্রমাগত সংক্রামিত করে চলছে পাবনায়। করোনা পরিস্থিতি যখন খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন মানুষের স্বাস্হ্যবিধি মানাটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। পাবনা জেলা পুলিশ করোনা সচেতনতায় মাঠে নেমেছে, নিরসল কাজ করে যাচ্ছে। জেলা পুলিশ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আহবান করা হচ্ছে। মাস্ক বিতরণ ও স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানতে উৎসাহীত করছে তারা। পাবনা সদর হাসপাতালে কোভিড ওর্য়াডের চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী অপ্রতুল উন্নত পারসোনাল ইকুউপমেন্ট( পিপিই) তারা পাচ্ছেনা তবুও যা আছে তা দিয়ে কোভিড রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি আরো জঠিল হলে তাদের পক্ষে সেবাদান দেওয়া সাধ্যের বাহিরে চলে যাবে। জেলা স্বাস্হ্যবিভাগের হিসেব অনুযায়ী জেলায় এখন পর্যন্ত কোভিডে মৃতের সংখ্যা ২৩ জন। করোনার উপসর্গ নিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করছেন যারা হয়তো শনাক্ত হয়নি, তাদের মোট সংখ্যা কত বা সেগুলো কি স্বাস্থ্যবিভাগের হিসেবে রয়েছে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে বলে মনে করেন ডাঃ রাম দুলাল ভৌমিক তিনি বলেন, অনেকেই হয়ত মারা যাচ্ছেন যাদের মধ্যে কোভিডে উপসর্গ ছিল। তবে তারা শনাক্ত হয়নি বা তাদের পরিক্ষা করা হয়নি তারা হয়তো জেলা স্বাস্হ্যবিভাগের হিসেবে আসছেনা বলছিলেন পাবনা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক উপ পরিচালক ডাঃরাম দুলাল ভৌমিক। রবিবার সন্ধ্যায় পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বত:কন্ঠের বার্তা সম্পাদক নাসরিন পারভীন বাসায় থেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাকে পাবনা জেনারেল হাসপতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মহামারী পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ বিভাগ বলছে, সামাজিক ভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শহর থেকে গ্রামে মসজিদে মসজিদে মাস্ক পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মাইকিং করা হবে। কিন্তু কবে থেকে শুরু হবে জানা যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডাঃরাম দুলাল ভৌমিক তিনি মনে করেন, সামাজিক ভাবে সচেতনতা মূলক জাগরণ দরকার ছিল। মানুষকে নিজেরই তা মানতে হবে কেউ বলে কয়ে তাকে মানাতে পারবেনা। তবে সরকারের দেওয়া লকডাউন সর্মথন করে তিনি বলেন, এতে মানুষের সীমিত সমস্যা হলেও কোভিড অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদাহরণ দিয়ে বলেন, লকডাউনের পর সেখানে সংক্রমণ এখন কম। ভাইরাস সংক্রামিতর একটা চক্র সেটা যে স্টপ করার জন্য লকডাউন দিলে সুফল পাওয়া যায়। সকলের উচিৎ হবে লকডাউনের বিধিনিষেধগুলো মেনে চলা। তবে লকডাউনে গরীব মানুষগুলোর জীবিকার বিষয়টাও ভাবতে হবে। তাদের খাবার নিশ্চিন্ত করতে হবে। সরকার যে লকডাউন দিবে তা মানুষের জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই।
বর্তমানে মাত্র ৩৬ জন কোভিড- ১৯ রোগী পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে মোট সনাক্তের বেশীরভাগ মানুষ বাসায় থেকে, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন বলে জানা যায়। সপ্তাহ ধরে যেভাবে রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে সেতুলনায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হচ্ছেনা। পাবনায় এখনো পিসিআর ল্যাব স্হাপন হয়নি নমুনা পরিক্ষা করাতে দিয়ে রেজাল্ট আসতে দেরি হওয়ায় বাহক সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেন, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর জরুরী চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য দীর্ঘসময় ধরে মানুষ রাস্তায় মনববন্ধনের দাঁড়ালেও এখনো মেলেনি সেসকল কাঙ্ক্ষিত সেবা।
একমাস আগে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। হাসপাতাল সূত্র থেকে জানায় এ সকল সেবা চালু হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। জেলায় চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যবিধিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য,মুখে মাস্ক ব্যাবহার করতেই হবে। এ বিষয়ে অনেকের অনীহা বা ভালোলাগেনা স্বভাব পাল্টে ফেলার সময় চলছে এখন। পাবনায় বিশেষজ্ঞরা সর্তক করে বলেছেন, মাস্ক না পড়লে তার জন্য অপেক্ষা করছে ভেন্টিলেটর। হাসপাতালে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ভেন্টিলেটর নিতে না চাইলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। এবং মাস্ক থুঁতনির উপর নয় মুখ নাক ঢেকে সঠিক নিয়মে পড়তে হবে। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে ভীর,গেদারিং এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। অপরিষ্কার হাত নাকে,মুখে,চোখ স্পর্শ করা যাবেনা। অবশ্যই হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকতে হবে। অসুস্থ হলে মানুষের ভীরে না গিয়ে জরুরি ডাক্তারে পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। অসুস্থ হলে বাসার অন্য সদস্যদের ভাইরাস থেকে নিরাপদে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো সকলের ভালোর জন্যই মেনে চলতে হবে।