লকডাউনের বিধিনিষেধ মানছে না নগরবাসী
এইচ. এম জোবায়ের হোসাইন:
কয়েক দিন ধরে ময়মনসিংহে বেড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার। শনাক্তের বেশিরভাগই রয়েছে ময়মনসিংহ সিটিতে। সেই বিষয়টি চিন্তা করেই নগরীর জনবহুল ১১ এলাকা চিহ্নিত করে জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন।
গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শুক্রবার (২৫ জুন) থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এ বিধিনিষেধ। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকরের কথা থাকলেও সড়কে গিয়ে এর প্রভাব দেখা যায়নি ছিটেফোঁটাও।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর গাঙ্গিনারপাড়, পাটগুদাম, চরপাড়াসহ বিধিনিষেধ আরোপকৃত কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওইসব এলাকাগুলোতে যানবাহন ও মানুষের চলাচল রয়েছে স্বাভাবিক। বাইরে যারা বের হয়েছেন তাদের অনেকের মুখেও নেই মাস্ক।
ওইসব এলাকায় মাইকিং করে এ বিধিনিষেধের কথা জানানো হলেও দেখা যায়নি যথাযথ নজরদারি। ফলে নামকাওয়াস্তেই চলছে এই কঠোর বিধিনিষেধ। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় জেলাজুড়ে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের চারটি টিম।
তবে ওইসব এলাকায় চলাচল করা অটোরিকশা চালকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, পুরো নগরেই চলাচল করছে রিকশা-অটোরিকশা। কোথাও কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, এভাবে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিলে আসলে কাজ হবে না। আমরা কেউ জানি না যে কোন এলাকায় সংক্রমণ কেমন। আমরা চাই পুরো ময়মনসিংহ সিটিই লকডাউনের আওতায় আনা হোক।
তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বেশকিছু এলাকায় যে লকডাউন দেয়া হয়েছে, আসলে এটি কোনো লকডাউনই না। কোনোভাবেই এই লকডাউন মানা হচ্ছে না এবং এটি মানানোর জন্য প্রশাসনিক কোনো নজরদারিও নেই।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আয়েশা হক বলেন, বিধিনিষেধ কার্যকরে সকাল ৬টা থেকে আমাদের মোবাইল টিম কাজ করছে। এছাড়াও পুলিশ-র্যাবও কাজ করছে এবং মাইকিং করে সচেতনও করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন। যা শুক্রবার (২৫ জুন) সকাল ৬টা থেকে ১ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়।
বিধিনিষেধের আওতায় থাকা সিটি করপোরেশন এলাকাগুলো হলো মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড, চরপাড়া, আলিয়া মাদরাসা এলাকা, নয়াপাড়া, কৃষ্টপুর, নওমহল,আর কে মিশন রোড, বাউন্ডারি রোড, পাটগুদাম, কাঁচিঝুলি ও গাঙ্গিনাপাড়।
এদিকে, তিন দিনের করোনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১ হাজার ৩১২ নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ১৮৪ জনের শরীরে। এরমধ্যে সিটিসহ সদরেরই আছেন ৯৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৬৮ জন। যেখানে শনাক্তের হার ১৮ শতাংশের বেশি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা বিস্তাররোধে লকডাউন চলছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে তালিকা দিয়েছে, সেখানে করোনাভাইরাসের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলা।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮১ জন। এ পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ২৯৫ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৪জন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের আইসিউতে ভর্তি আছেন ৪ জন। এদিকে জেলায় এখন পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়েছন (প্রথম ডোজ) ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৯ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৯৬ হাজার ৯৩৫ জন।