শিরোনাম

South east bank ad

পঞ্চগড়ে সুপারি চাষীদের মুখে হাসি

 প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ লিহাজ উদ্দিন (পঞ্চগড়):

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিন দিন সুপারির চাষ বাড়ছে।

গেরস্তবাড়িতে অতিথি এসে যদি খালি মুখে চলে যায়, তাহলে গেরস্তের অমঙ্গল হতে পারে। তাই অতিথিকে অন্য কিছু খাওয়ানো হোক বা না হোক, পান-সুপারি অন্তত খাওয়াতে হবে। এই প্রথা মানতে বাড়িতে বাড়িতে যুগ যুগ ধরে কৃষকেরা কমবেশি সুপারি চাষ করে আসছেন।
তবে বর্তমানে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কৃষকেরা শুধু অতিথি আপ্যায়ন বা নিজেদের পান খাওয়ার জন্য নয়, বরং বাণিজ্যিকভাবেই সুপারির চাষ করছেন। এখন প্রতিদিনই স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে লাল রঙের পাকা সুপারি। এবার ভালো ফলন হয়েছে, দামটাও বেশ ভালো। এতে ভীষণ খুশি পঞ্চগড়ের সুপারিচাষিরা।

পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত সুপারি কিনে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ফলে স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি তাঁরাও ভালো মুনাফা করছেন। এভাবে দুই পক্ষ লাভবান হওয়ার সুবাদে দিন দিন এই অঞ্চলে সুপারিবাগানের সংখ্যা ও পরিধি বাড়ছে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পঞ্চগড় জেলার ৫টি উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের সুপারিবাগান রয়েছে। এসব বাগানে গত বছর সুপারি উৎপাদিত হয়েছে ৮ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন। সেটাকে ছাড়িয়ে যাবে চলতি মৌসুমের উৎপাদন।
পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণেই এখানকার সুপারি আকারে বড় ও সুস্বাদু হয়। সারা দেশে এই সুপারির চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো।
চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ—এই তিন মাস হলো সুপারির মৌসুম। বসতবাড়ির আশপাশে, চা-বাগানে ও উঁচু জমিতে সুপারির চারা লাগানোর আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফলন দিতে শুরু করে। বছরে এক-দুবার গোবর সার আর সেচ দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। সুপারির ফলন ও দাম—দুটোই ভালো হয়ে থাকে। অর্থকরী এই ফসল বিক্রি করে পঞ্চগড় জেলার কৃষকেরা অন্যান্য কৃষিপণ্য আবাদ ও পারিবারিক খরচ মেটান।
মৌসুমের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পঞ্চগড়ে এসে সুপারি কিনে নেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ আবার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি কিনে তা মাটিতে খাল করে পুঁতে বা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পানিতে পচানো ওই সুপারি (মজা সুপারি) শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বেশি দামে বিক্রি করেন তাঁরা।

বর্তমানে পঞ্চগড় জেলার ছোট-বড় প্রায় সব বাজারেই চলছে সুপারির জমজমাট বেচাকেনা। উল্লেখযোগ্য বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে জালাসী বাজার, হাঁড়িভাসা হাট, টুনির হাট, ভাউলাগঞ্জ হাট, জগদল হাট, ঝলইহাট, ফকিরগঞ্জ বাজার, ভজনপুর বাজার, ময়দানদিঘি বাজার, বোদা বাজার ইত্যাদি।
এদিকে কৃষি বিভাগ সুপারি উৎপাদনের হিসাব করে মেট্রিক টনে। তবে কৃষকেরা হিসাব করেন পণ ও কাহন হিসেবে। স্থানীয় বাজারগুলোতে সুপারি বিক্রি হয় পণ হিসেবে। প্রতি ২০ হালি (৮০টি) সুপারিতে এক পণ হয়। আর ১৬ পণ সুপারিতে হয় এক কাহন। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন হাটবাজারে বর্তমানে প্রতি কাহন পাকা সুপারি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার হাজার থেকে আট হাজার টাকায়। এতে প্রতি পণের দাম পড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
গত বছর প্রতি পণ সুপারি সর্বোচ্চ আড়াই শ টাকায় বিক্রি করেছি। অথচ এবার প্রতি পণ বড় পাকা সুপারি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দাম পেলে সুপারির বাগান আরও বাড়াব।
সলেমান আলী, সুপারিচাষি
জালাসী বাজারে কৃষক সলেমান আলী বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমিতে সুপারির বাগান আছে। সেই বাগান থেকে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ কাহন সুপারি পাই। এবারও বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। বাজারেও দাম ভালো। গত বছর প্রতি পণ সুপারি সর্বোচ্চ আড়াই শ টাকায় বিক্রি করেছি। অথচ এবার প্রতি পণ বড় পাকা সুপারি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দাম পেলে সুপারির বাগান আরও বাড়াব।’
জালাসী বাজারে ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, তাঁরা পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে সুপারি কিনে ঢাকা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠান। প্রতি কাহন সুপারি মানভেদে সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকায় কিনছেন। তা বস্তায় ভরে বাইরের কোনো জেলায় পাঠাতে প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়। প্রতি বস্তায় (দুই কাহন) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। তিনি বলেন, ‘এবার বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের যেমন লাভ হচ্ছে, তেমনি আমাদেরও লাভ হচ্ছে।’
ময়মনসিংহের ব্যবসায়ী মফিজার বলেন, ‘পঞ্চগড়ের সুপারি আকারে বড়, স্বাদও ভালো। আমরা কয়েক বছর ধরে পঞ্চগড় থেকে সুপারি কিনে নিয়ে যাই। তবে কয়েক বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি। গত বছর যে সুপারি আমরা ২০০ টাকা পণ দরে কিনেছি, তা এবার ৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সুপারি এলাকায় নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখব। প্রায় দুই মাস পর মজা সুপারি হিসেবে বিক্রি করব।’
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণেই এখানকার সুপারি আকারে বড় ও সুস্বাদু হয়। সারা দেশে এই সুপারির চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো। সে জন্য পঞ্চগড়ের কৃষকেরা এখন শুধু বাড়ি ও চা-বাগানের চারপাশেই নয়, এমনকি জমির আইলেও সুপারির চাষ করছেন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: