শিরোনাম

South east bank ad

ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সাবেক দুই ডেপুটি গভর্নরসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ

 প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদ গর্ভনরের পরবর্তী পর্যায়ের পদই হচ্ছে ডিজি। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তাদের সময়কার দায়িত্ব পালন নিয়ে। গতকাল সাবেক দুই ডিজিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাকে ডেকেছিল তদন্ত কমিটি।
দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় (এনবিএফাআই) ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণে অনিয়ম হয়েছে। এসব অনিয়মের বড় অংশই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। সেই ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত তদন্ত কমিটি। গতকাল সেই কমিটির মুখোমুখি হলেন সাবেক দুই ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) এসকে সুর চৌধুরী ও এসএম মনিরুজ্জামান। বাকিরা হচ্ছেন সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান ও শেখ আব্দুল্লাহ, বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম। বাংলাদেশ ব্যাংকের চতুর্থ তলায় গতকাল সবাই মুখোমুখি হন তদন্ত কমিটির সামনে। আর্থিক কেলেঙ্কারির সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়ভার চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। ঘটনার একটি সম্যক চিত্রও তৈরি করেছে। সেই আলোকেই সাবেক কর্মকর্তাদের ডেকেছিল। গতকালের জিজ্ঞাসাবাদের মূল বিষয়ই ছিলÑদায়িত্বে অবহেলা হয়েছে, এটা মনে করেন কি না? ঘটনার সূত্রপাত পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে হলেও কেনো শনাক্ত করা যায়নি। তাদের দায়িত্বের সময়েই কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছিল। এর পেছনের যৌক্তিক কারণ কী ছিল? পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পরও কেন অনিয়মের ঘটনা সংঘটিত হলো?

আদালতের নির্দেশে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং (কারণ উদ্ঘাটন) কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরুতে মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বলা হলেও পরে পুরো আর্থিক খাতের চিত্র তুলে আনতে শুরু করেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানকে প্রধান ও বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. সারোয়ার হোসেনকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।

কমিটিতে রাখা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান একাধিক কর্মকর্তা ও সাবেক এক জেলা জজকেও। এতদিন কমিটি কাগজপত্র ও বিভিন্ন সূত্রে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এজন্য বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। গতকালই প্রথমবারের মতো শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা।‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ নামে গঠিত কমিটির প্রধান হচ্ছে বর্তমান ডেপুটি গভর্নর-৩ একেএম সাজেদুর রহমান। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত একে একে কমিটির সামনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ডাকপ্রাপ্তরা। এছাড়া বিদ্যমান আইনের কোনো ঘাটতি রয়েছে কি না বা তাদের ক্ষমতায়নে কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল কি না, এসব বিষয়ই ছিল মূল আলোচনার বিষয়ে। একইসঙ্গে উঠে আসে আর্থিক বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুবিধা নেয়ার বিষয়টি।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সবই মিথ্যা। আমার যা বলার তা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটিকে বলেছি।’ এরপর আসেন সাবেক ডিজি এসএম মনিরুজ্জামান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাকে ডেকেছিল, তাই দেখা করতে এসেছিলাম।’ কোন অভিযোগের ভিত্তিতে ডাকা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তারাই (বাংলাদেশ ব্যাংক) ভালো জানে।’

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ওই সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে থাকায় আমাকে ডাকা হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না।’

প্রসঙ্গত, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি অনিয়ম করেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। তিনি এ দুটি ছাড়াও একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। আপাতত পাওয়া তথ্যমতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, পাঁচ হাজার কোটি টাকার সুবিধাভোগী হচ্ছেন পিকে হালদার।

বর্তমানে পিকে হালদার কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে। মাত্র ৯ মিনিটের ব্যবধানে সীমান্তে তাকে আটকাতে পারেনি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি তদন্তের মোড় নেয় পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হকের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল হক অভিযোগ করেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব অনিয়ম ও দুর্নীতি চাপা দিতে মাসোহারা নিতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।’

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: