টাঙ্গাইলে উদ্বোধনের ছয় মাসেও উপকারভোগীরা থাকতে পারছে না প্রধানমন্ত্রীর ঘরে
মো: আবু জুবায়ের উজ্জ্বল (টাঙ্গাইল):
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের ছয় মাস অতিবাহিত হলেও টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় মুজিব বর্ষের ঘর গুলোতে থাকছে না উপকারভোগীরা। স্থানীয়রা জানান, উপকারভোগীরা না থাকায় ওইসব ঘরে মাদকের আড্ডা ও জুয়ার আসর বসানো হয়। এছাড়াও ধুলা, বালু, ময়লা আবর্জনা পড়ে রয়েছে ঘর গুলোতে। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে উপকারভোগিরা এখন ঘর বুঝে পায়নি।
অপরদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ, টিউবওয়েল নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় উপকারভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘরে এখনও উঠতে পারেনি।
অপর দিকে দেশব্যাপি দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘর গুলো হস্তান্তরের সময় ঘনিয়ে এসেছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, গৃহহীন থাকবে না একটি পরিবার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলায় হতদরিদ্র, অসহায় ও গরীব গৃহহীন মানুষের মাঝে দুই শতাংশ জমিসহ আধা পাকা দেওয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম পযায়ে দুই হাজার ২০০ পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর হস্তান্তরের উদ্বোধন করেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে সদর উপজেলার চিলাবাড়িতে ৪৯ টি, দাইন্যা তিনটি, রসুলপুর ৪৫ টি, গালা ১৭ টি, মগড়া ৫০ টি, ঘারিন্দা সাতটি, করটিয়া ১০ টি, ছিলিমপুর ১০ টি, পোড়াবাড়ী ২৩ টি, কাকুয়া দুইটি, হুগড়া দুইটি, কাতুলী তিনটি, মাহমুদনগর চারটি ও পৌরসভায় তিনটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিন সদর উপজেলার রসুলপুর ও চিলাবাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, ঘর গুলোর নির্মাণ কাজ শেষ। কোথাও কোথাও এখনও রং এর কাজ বাকি রয়েছে। ঘরের কক্ষ গুলো নোংরা, জুয়া খেলার তাস, মাদক সেবনের সামগ্রী পড়ে রয়েছে। বাথরুম গুলো অপরিস্কার ও সারিবদ্দ ঘরের সামনে পানি জমে রয়েছে। কোন কোন সেফটি ট্যাংকের ডাকনা লাগানো হয়নি। উঠানের গাছ কাটা হলেও বড় বড় শিকড় এখনো অপসারণ করা হয়নি। স্থানীয়রা জানান, উপকারভোগীরা বসবাস না করায় ঘর গুলোর এই দুর্বস্থা। বুধবার বিদ্যুতের খুঁটি লাগানো হলেও বিদ্যুতের তার ও সংযোগ দেওয়া হয়নি। কোন ঘরেই বিদ্যুতের তার, বাল্ব ও সুইচ লাগানো হয়নি।
রূপচাঁন শেখ নামের এলাকাবাসী বলেন, ‘চিলাবাড়ী গ্রামের ঘর গুলোতে কেউ না থাকায় রাতে আড্ডা ও জুয়ার আসর বসে। ছয় মাস আগে শুনছিলাম ঘরে থাকা শুরু করবে গৃহহীনরা। তবে এখনও পর্যন্ত থাকছে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপকারভোগি বলেন, ‘আমদের কষ্ট, দুর্দশা ও দুর্ভোগ দেখে শেখের বেটি শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিছে। কিন্তু আমরা ৬ মাসেও ঘরে উঠতে পারি নাই। অপর দিকে প্রথমে যে তালিকা করা হয়েছিলো সেই তালিকাও আবার পরিবর্তন করা হয়েছে। যাদের ঘর বাড়ি আছে তাদেরকেও তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও অনেক প্রভাবশালী ও তাদের স্বজনদের নাম ঘর পাওয়ার তালিকায় রয়েছে।’
দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাভু বলেন, ‘ইউনিয়নে কতজন উপকার ভোগির মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে তার সঠিক তালিকা আমার কাছে নাই। ঘরের তালিকা তৈরীতেও আমাদের সাথে কোন আলোচনা করে নাই। কবে ঘর দিবে, কাকে দিবে, কোথায় দিবে তাও জানি না। আমাদের কাছ থেকে কোন নামও নেয়নি, তালিকাও দেয় না।’
গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজ কুমার বলেন, ‘প্রথমে ইউপি মেম্বার, ভ‚মি অফিসের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় যে তালিকা করেছিলাম পরবর্তীতে সেই তালিকা রাখা হয়নি। যারা ¯øুইচ গেট ও খাস জমিতে বসবাস ঘরে এবং যাদের অগ্রাধিকার প্রথমে থাকার কথা তাদের নাম তালিকায় রাখা হয়নি। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও আমার ইউনিয়নে উপকারভোগীরা এখনও ঘরে থাকতে পারছে না।’
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, ‘যে সময় প্রথম পর্যায়ের ঘর গুলো উদ্বোধন করা হয় ওই সময় আমি এখানে ছিলাম না। শুনেছি সদরের বরাদ্দ গুলো সবার শেষে এসেছে। সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২২৮ টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। কাজ কিছুটা বাকি থাকায় এখন উপকারভোগীদের উঠানো হয়নি।’
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ ও টিউবওয়েল নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় তারা এখনও থাকতে পারেনি। তবে বিদ্যুতের কাজ চলমান রয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপকার ভোগীরা থাকতে পারবে।’