ভাঙ্গনের হুমকিতে ফেরি ঘাটসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর
খন্দকার রবিউল ইসলাম (রাজবাড়ী):
গেল কয়েক বছরের পদ্মা নদীর করাল গ্রাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ভিটেবাড়ী ও শত শত একর ফসলি জমি। জমিজমা ও বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। আবারও নতুন করে ভাঙ্গনের আসংখ্যায় নীরঘুম রাত কাটছে নদীপারে থাকা মানুষ গুলোর।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই নৌরুটের রাজবাড়ী প্রান্তে রয়েছে দৌলতদিয়া ঘাট ও মানিকগঞ্জ প্রান্তে রয়েছে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই রাজবাড়ী দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে যেমন ফেরি ঘাটের জায়গা কমে যাচ্ছে তেমনি ভাবে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের মানচিত্র ছোট হতে শুরু করেছে।এছাড়াও গত কয়েক বছরের ভাঙ্গনে ফসলি জমি,বসটভিটা বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এবছরও বর্ষা মৌসুম না আসতেই পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দৌলতদিয়া প্রান্তে শুরু হযেছে নদী ভাঙন। এই নদী ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে দৌলতদিয়া প্রান্তের নবনির্মিত ৭ নং ফেরি ঘাট। এতে করে ৭নং ফেরিঘাটের আশেপাশের এলাকার অর্ধশতাধিক বসতভিটা ও দোকানপাট ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৭ নং ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যগ ফেলছে বিআইডবি¬উটিএ। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এসব এলাকার জিও ব্যগ ধসে পাড়েছে। এছাড়াও নবনির্মিত ৭নং ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কে পানি উঠে গেছে।এতে করে ঝুঁকি নিয়েই যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠতে দেখা গেছে।
গত কয়েকবছর ধরে পদ্মার এই ভয়াবহ ভাঙনের ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার মানচিত্র। এই বছর বৃষ্টির শুরুতেই পানি বৃদ্ধির ফলে ওই এলাকার প্রায় ১০০ মিটার নদীর তীর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙন রোধ ও ফেরি ঘাট রক্ষায় ওই এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর এই ঘাট রক্ষার্থে কোটি কোটি টাকার কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি)। এবার ভাঙন রোধে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ২২ হাজার বস্তা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলবে বিআইডব্লিউটিএ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,কতৃপক্ষের গাফিলতির কারনেই ঘাট এলাকায় এই ভাঙন। শুকনো মৌসুমে যদি বালু ভর্তি জিও ব্যগ ফেলানো যেতো তাহলে এই ভাঙন রোধ করা যেতো। তবে স্থানীয়দের দাবি এই ভাঙন প্রতিরোধে কতৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে দৌলতদিয়া ঘাট হারিয়ে যাবে।
৭ নং ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা রানা মিয়া জানান,নদী ভাঙনে কয়েকটি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এছাড়াও অর্ধশত পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ওই এলাকার কৃষি জমিসহ রাস্তাাঘাট নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম পদ্মার গ্রাসে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দ দুলাল মন্ডল বলেন, নদী ভাঙনে কয়েকবার তাদের ভিটেমাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবার ভাঙলে আর যাবার জায়গা নাই।গত বছর জিও ব্যাগ ফেললেও এ বছর কতৃপক্ষের তেমন কোন নজর নেই।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, দৌলতদিয়া ঘাটের ভাঙন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ বস্তা ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। এ মৌসুমে ঘাট এলাকায় প্রায় ২২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহা ব্যবস্থাপক (এজিএম) ফিরোজ শেখ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করার পরপরই ৭ নম্বর ফেরি ঘাট ভাঙতে শুরু করে। তখনই ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও তারা সুদুরপ্রসারি কোন ব্যবস্থা নেয় নি।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সী বলেন, খুব দ্রুত নদীশাসনের কাজ শুরু করতে না পারলে এবারও ভাঙনে দৌলতদিয়ার অনেক অংশ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।এতে অনেক ক্ষয় ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর আহাদ বলেন দৌলতদিয়া ৭নং ফেরি ঘাট এলাকায় যে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে সেখানে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ। তারা আমাদের চিঠির দিয়ে জানিয়েছেন লঞ্চ ঘাট থেকে ৭নং ফেরি ঘাট পর্যন্ত ২কিলোমিটার এলাকায় তারা কাজ করবে। যে কারনেই আমরা সে খানে কাজ করছি না। এছাড়াও অন্য স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে সে খানে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব।