শিরোনাম

South east bank ad

ঘুর্ণিঝড় ‘ইয়াসের’ প্রভাবে দু’দিন ধরে দুপুরের রান্না হয়নি শতাধিক পরিবারে পানির তোড়ে চলাচলের রাস্তা নদীতে

 প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):

ঝালকাঠিতে ঘুর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, পূর্ণিমার জোয়ার ও চন্দ্রগ্রহনের প্রভাবে ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষখালি নদীতে বেড়িবাধ না থাকায় পানি ঢুকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভেসে গেছে কয়েকশ ঘের ও পুকুরের মাছ। একারনে শতাধিক পরিবারের রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দু’দিন ধরে দুপুরের রান্না করা সম্ভব হয়নি নদী তীরবর্তি স্থানের বাসিন্দাদের। এসময় সরকারী সহায়তা পেতে ৩৩৩ নম্বরে কল দিলে কোন সাহয়তা পায়নি বলে অভিযোগ জনসাধারনের। বৃহস্পতিবার সকালে নদীর পানির চাপে গ্রামীন চলাচলের প্রায় ৫০মিটার রাস্তা ভেঙে নদীতে মিশে যায়। এতে গাবখান ধানসিড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে নৌকায় খেয়া তৈরী করে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুর থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। জানাগেছে, ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ফুট বেশি হওয়ায় বিষখালী নদী তীরবর্তি সদর উপজেলা ও কাঠালিয়ায় নদীর বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। জেলার নিম্মাঞ্চলে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত। ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে শতাধিক মাছ চাষী ও কয়েকশত কৃষক। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ফুট বাড়তি ছিলো। বৃহস্পতিবার ভোরে বিষখালী নদী তীরবর্তি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামে গ্রামীণ চলাচলের প্রায় ৫০মিটার রাস্তা ভেঙে নদীতে মিশে যায়। এতে ওই এলাকার ৫টি গ্রামের জনসাধারনের চলাচল ব্যাহত হয়। পরে স্থানীয়রা নৌকায় ১০টাকা ভাড়ায় খেয়া পারাপারের মাধ্যমে জনসাধারনের চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী বারৈকরণ খেয়াঘাট সংলঘœ কুতুবনগর ভেরিবাঁধটি ঘূর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর উত্তাল ঢেউয়ে ভেঙ্গে গাছপালা নিয়ে নদীতে বিলিন হয়েছে। এই ভেরিবাঁধের আওতায় ২ হাজার একর ফসলি জমি ও ৫শ পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস হুমকির মুখে পড়েছে। ২০০০ সালে বারৈকরণ খেয়াঘাট থেকে পূর্বদিকে ১.২৫ কি:মি: ভেরিবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন সময় ভেরিবাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্নিঝড় আম্ফান আসার পূর্বে ভেরিবাঁধটি গুনগত মান বজায় রেখে পানি উন্নয়ন বোর্ড সংস্কার করে। কিন্তু আম্ফানের আঘাতে ভেরিবাঁধের ৫০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইয়াসের প্রভাবে উত্তাল তুফানে ভেরিবাঁধটি এবার সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। ভেরিবাঁধের ফসলি জমির পাশাপাশি মসজিদ ও মাদ্রাসা এবং ভেরিবাঁধ এলাকার দোকান-পাট হুমকির মধ্যে রয়েছে। বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি এলাকার জনগণকে দিয়েছেন।

অপরদিকে জেলার কাঠালিয়া উপজলা পরিষদ ও কাঠালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বিষখালী তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙ্গে পানি ঢুকে বাড়ির আঙ্গিনাসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। এতে অতি কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাঁধ ভাঙ্গনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে কাঠালিয়া সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বড় কাঠালিয়া, পূর্ব কচুয়া, লতাবুনিয়া, রঘুয়ার দড়ির চর, সোনার বাংলা, আওরাবুনিয়া, জাঙ্গালিয়া, ছিটকী ও আমুয়া, ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি, নতুন কলাবাগান, পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকা, রাজাপুরের বাদুরতলা লঞ্চঘাট, নাপিতের হাট, চল্লিশ কাহনিয়া এলাকাসহ সুগন্ধা-বিষখালী নদী তীরবর্তী নিন্মাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে অধিক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

ভাটারাকান্দা গ্রামের গৃহবধু লাইলী বেগম জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকেই নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। তার আগে রান্না করে রেখেছিলাম। রাতের পানিতে বাড়ির আঙ্গিনা ও রান্না ঘর তলিয়ে যায়। চুলার (উনুন) মধ্যে পানি ওঠায় বুধ ও বৃহস্পতিবার দুপুরে রান্না করতে পারিনি। চিড়া-মুড়িসহ শুকনো খাবারে ২দিন কাটাইছি। ওই এলাকার ইউপি সদস্য প্রার্থী মো. কামাল হোসেন জানান, আমাদের এলাকার অনেক ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুপুরের রান্না করতে পারেনি অনেকেই। খাদ্য সহায়তার জন্য সরকারী সেবার হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল দিলে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ধন্যবাদ বলে কেটে দেয়। ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন জানান, নদীর পানির চাপে প্রায় ৫০মিটার রাস্তা ভেঙে নদীতে মিশে গেছে। এতে গাবখান ধানসিড়ি ইউনিয়নের চরভাটারাকান্দা, ভাটারাকান্দা, সাচিলাপুর, চর সাচিলাপুর, কিস্তা কাঠি, চর কিস্তাকাঠিসহ কয়েকটি গ্রামের লোকজনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে নৌকায় খেয়া তৈরী করে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুর থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। বিষখালী নদী পাড়ের (বাঁধ ভাঙ্গন) বাসিন্দা আঃ রব খান জানান, ঝড়-বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আমারা খুবই আতংকে থাকি। রাতে আতঙ্কিত হয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে থাকি। কখন বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে নদীতে চলে যায়। হঠাৎ করে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যেভাবে পানি উঠতে তাতে জীবন বাঁচানো কষ্ট হয়ে পড়ে। কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ জহিরুল লিমন জানায়, বহু বছর ধরে লঞ্চঘাট এলাকা ভেঙ্গে নদী বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর লঞ্চলঘাটের ৩শ মিটার এলাকায় বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের উত্তর সাইডে কিছুই ফেলানো হয়নি। পানির স্রোতের চাপে প্রতিদিন নদী ভাঙ্গছে। বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে আমাদের এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় সবাই আতংকে ছিলাম। তাই দ্রুত এ বাঁধটি মেরামত করা জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানাই। কাঠালিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান জানান, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কোথাও বড় ধরনের কোন সমস্যা নেই। তবে উপজেলা পরিষদের পিছনের বিষখালী তীরের বাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গেছে। কিন্তু তেমন কোন ক্ষতির আশংকা নেই।

ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কৃষ্ণ ঘোষ জানান, পানি বৃদ্ধির কারনে তিন শতাধিক ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৩কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুন্নয়ন রাজস্ব বাজেট এর আওতায় পানি প্রবাহ রোধে বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ ও ঘুর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শ করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন।

এ সময় উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান শুভ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল বারী ও মো. রুবেল হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব হোসেন জানান, ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলকা জরিপের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা পাওয়ামাত্র দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: